চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ থানা জামে মসজিদে চুরির ঘটনায় কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেবে না বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, আল্লাহর ঘরে চুরি করেছে, স্বয়ং আল্লাহ তাকে শাস্তি দিয়েছে। চুরির যাবতীয় মালামাল থানা থেকে আমাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি জেনেছি ওই যুবক খুবই গরিব পরিবারের ছেলে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। মসজিদ কমিটি আহত ওই যুবককে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সহযোগিতা করবে না কমিটি। এখন আমাদের কিছুটা খরচ হবে ভাঙা কাঁচের দরজার জন্য। নতুন লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন : মসজিদে চুরি করতে এসে যা লিখে গেল চোর

এর আগে, গত শনিবার (১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে মসজিদে চুরির সময় কাঁচের দরজায় পা কেটে গুরুতর আহত হয় আপন নামে ওই চোর। চলে যাওয়ার সময় খাতার পাতায় লিখে রেখে যায়, ‘আমি চুরি করতে এসেছিলাম, কিন্তু সত্যি আমি চোর না। আমার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ, তাই এটা করতে বাধ্য হলাম। আর শাস্তি পেলাম পায়ে সেলাই। আমার পা অনেকখানি কেটে গিয়েছে, আমাকে সবাই মাফ করে দিন। আমি এইচএসসি পাস। কিন্তু জীবনে কিছু করতে পারিনি।’

এরপর ওই রাতেই গুরুতর আহত অবস্থায় অভিযুক্তকে আটক করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। পরে চুরির যাবতীয় মালামাল উদ্ধার করে মসজিদ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 
 
জীবননগর থানা এবং জীবননগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ওই যুবকের নাম আপন এবং তার বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামে। তবে ওই ঠিকানায় খোঁজ নিয়েও যুবকের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এমনকী যশোর সদর হাসপাতালেও এই নামের কাউকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাতে দৌলতগঞ্জ থানা জামে মসজিদে কাঁচের দরজা ভেঙে এক যুবক মসজিদের রশিদ বই, সাউন্ড সিস্টেম, ইয়ার ফোন, মাইক সেটের অংশ বিশেষ চুরি করে নিয়ে যায়। এসময় কাঁচের দরজা ভাঙতে গিয়ে তার হাত-পা কেটে রক্তাক্ত জখম। এছাড়া মসজিদের বাইরে থাকা দান বাক্সটি ভাঙার চেষ্টা করে। 

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ঘটনার পর আমরা চোরকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। পরে জানতে পারি, অভিযুক্ত যুবক জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর হাসপাতালে রেফার্ড করেছে তাকে। 

তবে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ এবং স্থানীয়রা এক যুবককে আহত অবস্থায় নিয়ে আসে। তার পায়ের পাতায় গভীর ক্ষত ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেছি তাকে। 

তিনি আরও বলেন, ওই যুবকের সঙ্গে কেউ ছিল না। ওই রাতেই কিছু টাকা তুলে অ্যাম্বুলেন্সযোগে যশোরে পাঠানো হয় তাকে। তবে জেনেছি, তার সঙ্গে কেউ ছিল না। তাই যশোরে না গিয়ে কোটচাঁদপুরে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে অ্যাম্বুলেন্সচালক।

জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এসএম জাবিদ হোসেন বলেন, চোরকে শনাক্ত করা গেছে। পুলিশ ওই যুবকের নাম ঠিকানা নোট করলেও আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই। 

আফজালুল হক/এমএএস