মেহেদী হাসান আশিক

কুমিল্লায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন বেকার যুবক-যুবতীর কাছে থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেহেদী হাসান আশিক (৪৫) নামে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে। 

এ ঘটনায় পরিবার নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন আশিক। তিনি জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নের বানীপুর এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। 

সম্প্রতি প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে শেরপুর থেকে লায়লা আক্তার নামের এক নারী প্রতারক আশিকের বাড়িতে আসেন। এসময় তার উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দেন আশিক। পরে সদর দক্ষিণ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর ভূঁইয়া ওই প্রতারককে আটকের আশ্বাস দিলে শেরপুরে ফিরে যান লায়লা আক্তার। 

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) মোবাইল ফোনে লায়লা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ফেসবুকে আশিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। আশিকের ফেসবুকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ও সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে ছবি দেখেন লায়লা। পরিচয়ের একপর্যায়ে আশিক জানায়, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্যতা আছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, মন্ত্রীর ছোটভাই সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার এবং অর্থমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সচিব কেএম রতন সিংহের সঙ্গে আশিকের ওঠাবসা আছে। সে চাইলেই যে কাউকে চাকরি দিতে পারে। এ কথা শুনে আমি তাকে আমার বাড়ি শেরপুরে আমন্ত্রণ জানাই। পরে আমার গ্রামে বাড়ি শেরপুর যান আশিক। এসময় আমার স্বামী এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হন। নিজেকে  অ্যাডভোকেট (আইনজীবী) পরিচয় দেন আশিক। পরে তিনি আমার ছোটবোন নাছরিন আক্তার মিতুকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাতে দাবি করেন ১২ লাখ টাকা। আশিক কুমিল্লায় চলে এলে আমি বিকাশে এবং নগদে ৪ লাখ টাকা পাঠাই। এরপর থেকে কেমন অদ্ভুত আচরণ শুরু করে আশিক। 

লায়লা আরও বলেন, ফোন ধরে না, ফেসবুক থেকে ব্লক করে দেয়। অন্য মোবাইল নম্বর দিয়ে কল দিলে ফোন তুললেও আমার কণ্ঠ শুনে কেটে দিতেন। পরে বাধ্য হয়ে শেরপুরের আদালতে প্রতারণার অভিযোগে আশিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। তাতেও কাজ না হওয়ায় আশিকের বাড়িতে যাই। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা আশিক ও তার পরিবার। আমি বহু কষ্ট করে ৪ লাখ টাকা ম্যানেজ করেছি। ওই টাকার জন্য পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়েছে। ওই টাকা ফেরত না পেলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।

শেরপুর থেকে লায়লার আগমনের পর আশিকের কুকীর্তি বেরিয়ে আসে। ওই এলাকা এবং আশপাশের অন্তত ৪০ জন যুবক-যুবতী প্রতারণার শিকার হওয়ার খবর জানা যায়। তাদের মধ্যে সদর দক্ষিণ উপজেলার শিমপুর এলাকার সাইফুল নামের এক যুবকের কাছ থেকে ২ লাখ, জাহাঙ্গীর নামের এক যুবকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, রেলে চাকরি দেবে বলে আবু তাহেরের থেকে ২ লাখ টাকা, চাকরি দেবে বলে কমলাপুর ইয়াসিন মজুমদারের থেকে ২লাখ টাকাসহ বিভিন্ন লোকের থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেন আশিক। তবে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায়নি এতদিন। 

ভুক্তভোগীরা জানান, টাকা ফেরত চাইলেই আশিক বিভিন্ন হুমকি দিত। তিনি অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোক, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং অর্থমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সহকারীর কাছের মানুষ। ভয়ে এতদিন মুখ না খুললেও লায়লা আক্তার শেরপুর থেকে প্রতারক আশিকের খোঁজে তার বাড়িতে আসার পর এক এক করে মুখ খুলছেন সবাই। 

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান আশিকের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

অর্থমন্ত্রীর ছোটভাই সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেই। এসময় অনেকেই আমাদের সঙ্গে ছবি তোলে। পরে যদি সেসব ছবি দেখিয়ে প্রতারণা করা হয় তাহলে আমাদের কী করার আছে বলেন? তবে ওই প্রতারকের উপযুক্ত শাস্তি হোক। ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন সাহস না করে সেজন্য প্রতারকের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। 

সদর দক্ষিণ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শেরপুর থেকে লায়লা আক্তার নামের এক নারী আশিকের বাড়িতে অনশন করছে মর্মে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি আশিক ও তার পরিবার পলাতক। আমরা ওই নারীকে আশ্বস্ত করি যে আশিককে আইনের আওতায় আনা হবে, তখন ওই নারী তার এলাকায় চলে যান। যেহেতু আদালতে একটি মামলা চলমান আছে, সেটির ওয়ারেন্ট এলে অবশ্যই আশিককে খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে। 

আরিফ আজগর/আরকে