“তালগাছগুলোর বয়স এক যুগেরও বেশি। এই গাছ হতে অনেক সময় লাগে। আর বিদ্যুতের লাইন এইতো কয়েক বছর আগের। গাছ কাটার সময় আমি তাদের নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেনি। এভাবে তালগাছ কাটা কি ঠিক হলো?”

এক যুগ আগে রোপণ করা ৪০টি তালগাছ পল্লী বিদ্যুতের লোকজন ন্যাড়া করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন নওটিকা গ্রামের রাজ্জাক সরকার। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা-পাঠানপাড়া সড়কের দুপাশে আধা কিলোমিটার জুড়ে থাকা তালগাছ ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলো ন্যাড়া করে ফেলার কারণে ধীরে ধীরে মরে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই সড়কে উজ্জ্বল নক্ষত্র ফাউন্ডেশন নামে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানববন্ধন করেছে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সংগঠনের আমানুল্লাহ আমান বলেন, পরিকল্পিতভাবে সড়কের ৪০টি তালগাছ হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

 গাছ কাটা প্রতিবাদে মানববন্ধন করে উজ্জ্বল নক্ষত্র ফাউন্ডেশন। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।

ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা-পাঠানপাড়া সড়কের কর্ণপাড়া-পাঠানপাড়া অংশে সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে তালগাছগুলোর অবস্থান। সোমবার (২ অক্টোবর) বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, গণমঙ্গল থেকে পাঠানপাড়া রাস্তার কর্ণপাড়া এলাকার পূর্বপাশের কিছু তালগাছে ডাল কাটা হয়েছে। এর কিছু পরের অংশ থেকে পাঠানপাড়া পর্যন্ত পশ্চিমপাশে বিদ্যুতের লাইন ছিল। লাইনের দুপাশের ছোট-বড় সব গাছ ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি গাছের দুএকটি ডাল রাখলেও মাথা রাখা হয়নি।

প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী এম রাসেল আহমেদ বলেন, যখন এই তালগাছগুলো কাটা হচ্ছে, তখন আমি প্রতিবাদ করলাম। তারপরও তারা না শুনে ন্যাড়া করে কেটেছে। এখানে প্রায় ৪০টি তালগাছের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন। এর আগে কয়েকটি গাছ ন্যাড়া করে দেওয়ায় তা মারা গেছে। এবার এই গাছগুলোও মারা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ ক্ষেতলাল সাব জোন অফিস গণমঙ্গল অভিযোগ কেন্দ্রের লাইন টেকনিশিয়ান মো. সাহাদত হোসেন বলেন, তালগাছগুলোর ডাল একটু রেখে কাটতে পারতো। কিন্তু কাটতে কাটতে এমনভাবে কেটেছে। এখন লাইনের নিচে বিশেষ করে তালগাছ থাকলে বজ্রপাতে সমস্যা হয়। আশা করি এই বিষয়ে আমরা সচেতন থাকবো।

জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ ক্ষেতলাল সাব জোন অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. নাজিম হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নিয়ম হলো তারের উপরে, নিচে ও আশেপাশে ১০ ফিট কেটে দিতে হবে। এখানে গাছ বা ডাল থাকলে তা কেটে দিতে হবে। তালগাছের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া থাকলে এটা শ্রমিকদের ঠিক হয়নি। এর পক্ষে আমি না।

চম্পক কুমার/এএএ