১৮ বছরেও শারীরিক গঠনের কোনো পরিবর্তন হয়নি ইয়াছিন গাজীর। দিন দিন শুকিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে। তাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে তার মা-বাবা। তারা চেষ্টা করেছেন চিকিৎসা করানোর। তবে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি। তবুও যেন হাল ছাড়েননি বাবা। চিকিৎসা ও ওষুধপত্র চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো। এমনকি নিজের সর্বস্বটুকুও শেষ করেছেন সন্তানের চিকিৎসায়।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম পাতাখালি গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দীন গাজী। গত ১৮ বছর আগে আলাউদ্দীন ও সালমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। নাম রাখা হয় ইয়াছিন। জন্মের পরই আনন্দের মুহূর্তগুলো যে কান্নায় পরিণত হবে সেদিন ভাবেনি কেউ। 

ইটভাটা শ্রমিক আলাউদ্দীন গাজী জানান, ইয়াছিন যখন জন্মগ্রহণ করে তখন স্ত্রীর সন্তান প্রসবের জন্য অনেক কষ্ট হয়। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর গ্রামের ধাত্রীরা জোরপূর্বক মাথা টেনে গর্ভ থেকে বের করে। সেই দিন থেকে অসুস্থ ছেলেটি। আমার বড় সন্তান খুব যত্নের। ডাক্তার দেখাতে ও ওষুধ খাওয়াতে খাওয়াতে কেটে গেছে ১৮টি বছর। ইয়াছিনের বয়স এখন ১৮ হলেও কথা বলতে পারে না। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। কঙ্কালের মতো দেখতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা, খুলনা, ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু সুস্থ হয়নি। যে চিকিৎসকের কাছে যাই তিনিই বলেন, ইয়াছিন সুস্থ হবে না। এভাবে যতদিন ওষুধখাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এটা বলে, আমরা গরিব মানুষ হয়তো টাকা দিতে পারব না এ কারণে। আমার দেড় বিঘা জমি ছিল। ছেলেটিকে সুস্থ করার জন্য সেটুকুও বিক্রি করে দিয়েছি। এখন তিন শতক ভিটেবাড়ি ছাড়া বাকি কিছু অবশিষ্ট নেই। তাছাড়া আমি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করি। সেই উপার্জনের টাকাও খরচ করেছি ছেলেটির পেছনে। জন্মের পর থেকেই আমরা ছেলেটিকে নিয়ে কাঁদছি।

ইয়াছিন গাজীর মা সালমা বেগম বলেন, প্রচুর কষ্ট হয়। ছেলেটির কষ্ট দেখতে পারি না। তবুও কি করব? নীরবে এখন সব সহ্য হয়ে গেছে। প্রতিদিন ১০০ টাকার ওষুধ লাগে। ভাত খেতে পারে না সুজি কিনে খাওয়াতে হয়। খাটের ওপর, বারান্দায় শুয়েই কেটে যায় ছেলেটার দিন। ওর বাবাও ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে বুকে ও পিঠে ব্যথা পেয়ে এখন অসুস্থ। আমার আরও একটা ছেলে ও একটা মেয়ে রয়েছে। তবে তারা স্বাভাবিক। মেঝো মেয়ে বৈশাখী বিজ্ঞান বিভাগে দশম শ্রেণিতে পড়ে। অষ্টম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল। ছোট ছেলে সাকিবুল হাসান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে ইয়াছিনকে নিয়ে একদিকে কান্না, অন্যদিকে আমরা অসহায় হয়ে গেছি। 

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য আমানউল্লাহ্ জানান, ছেলেটার খুব নাজুক পরিস্থিতি। ছেলের পেছনে তার বাবার সহায় সম্পদ শেষ করে ফেলেছে। তবে ছেলেটা সুস্থ হয়নি। কোনো রকমে বেঁচে রয়েছে। তবে একে বেঁচে থাকা বলে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এতে আর কত টাকা পায়? মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারটি।

অসুস্থ ইয়াছিন গাজীর বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতির বর্ণনা শুনে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়ত বলেন, এমনটা কেন হলো সেটি পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ছেলেটিকে যদি আমাদের কাছে নিয়ে আসে তবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। 

আকরামুল ইসলাম/এমএএস