ফাইল ছবি

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ইল্লা এলাকায় গত ৬ আগস্ট বাস ও ট্রলির সংঘর্ষে আবদুর রহমান সোহাগ (২২) নামে এক বাসযাত্রী নিহত হন। একই স্থানে ২ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে ফরিদ ব্যাপারী নামে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর গ্রামের এক বাসিন্দার শরীর বাসের চাপায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

শুধু ইল্লা নয় এমন অসংখ্য স্পট রয়েছে যেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। যেমন টরকি, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, আশোকাঠী, মাহিলাড়া, বামরাইল, নতুনহাট, রহমতপুর ব্রিজ, রেইনট্রিতলা, কাশীপুর ব্র্যাক অফিস মোড়ে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেশি। আরও অনেক স্থানই ঝুঁকিপূর্ণ।

কিন্তু এসব স্পটের তালিকা নেই সরকারি কোনো দপ্তরের কাছে। এমনকি জনসচেতনায়ও কোনো সাইনবোর্ড নেই। ফলে সড়ক পারাপার, পরিবহনে যাতায়াতে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা।

পদ্মাসেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আশীর্বাদ হয়ে এলেও ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের পরের সড়ক প্রশস্ত না করায় অপ্রশন্ত সড়ক মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ষাটের দশকে বাস্তবায়ন করা ২৪ ফুট প্রশস্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়কের প্রশস্ততা না বাড়ানোয় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল জেলার সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, প্রথমতো এক্সপ্রেসওয়ের পরের সড়ক প্রশস্ত না করায় দুর্ঘটনা নিয়মিতই লেগে রয়েছে। আমাদের সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অদ্ভুত চর্চা থাকায় অনেক কিছুই সুন্দরভাবে সমাধান হয় না। এরা অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে দায়মুক্ত হন। বহির্বিশ্বে সড়ক-মহাসড়কে নির্দেশনা থাকে। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা শনাক্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিশেষ নজরদারি করে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে তা কেউ করে না।

নিরাপদ সড়ক চাই বরিশাল জেলার আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ করলো সরকার। কিন্তু তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এই আইন বাস্তবায়ন হলে সকল প্রতিষ্ঠান জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। তখন গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় সামনে চলে আসবে। তাতে করে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করি।

গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল বলেন, হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া নতুনহাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটারের তথ্য বলতে গেলে সাধারণত বেপরোয়া গাড়ি এবং পথচারীদের অসচেতনতায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। পুরো মহাসড়কের যেকোনো স্থানে বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একই স্থানে অনেকবার দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে কোন কোন এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ তা আমরা শনাক্ত করি না।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) বরিশালের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. রুকনুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত সড়কে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া চালক, হেলপার এবং পথচারীদের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সকলকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতা না বাড়লে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো অসম্ভব।

তিনি বলেন, গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ কাজ করে। এসবের আইন অমান্য করে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে বিআরটিএ। তবে কোন কোন স্থান ঝুঁকিপূর্ণ তা আসলে আমাদের শনাক্ত করার সুযোগ নেই। সাধারণত যে প্রতিষ্ঠানের আওতায় যতটুকু সড়ক-মহাসড়ক থাকে যেমন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা তারাই ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক শনাক্ত করে থাকে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিক উল্যাহ বলেন, আমরা সড়কের মান উন্নয়নে অর্থাৎ ভেঙে যাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়ক সংস্কার করে থাকি। তবে সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ কোনো স্থান বা এলাকা শনাক্তকরণের কোনো তথ্য জানা নেই। এমন কোনো তালিকাও নেই আমাদের কাছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর