ভোলায় মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। হঠাৎ আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে বেড-সংকট। ফলে বেশির ভাগ রোগীকেই মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও মানুষের অসচেতনতায় প্রকোপ বেড়েছে ডায়রিয়ার।

ভোলা জেনারেল হাসপাতাল প্রশাসন জানায়, প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়ে আসছিল। কিন্তু বুধবার (৭ এপ্রিল) হঠাৎ দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলা সদর হাসপাতাল ও ৬টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন ১৩৩ জন। এই ১৩৩ জন রোগীর মধ্যে ৪১ জন শিশু; বাকিরা প্রাপ্তবয়স্ক।

ভোলা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ১০টি শয্যা বরাদ্দ থাকে। বিগত এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এখন প্রায় সব কক্ষেই ডায়রিয়া রোগী রয়েছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে থাকা কুলসুম নামের এক রোগীর স্বজন ঢাকা পোস্টকে জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে বাচ্চার ডায়রিয়া ও বমি দেখা দেয়। বুধবার সকালে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখন তার চিকিৎসা চলছে।

ভোলার পশ্চিম ইলিশা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নাইমের (৪) মায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সকাল ১০টার সময় ভর্তি হলেও বেড পাননি তিনি। তাই মেঝেতে শুইয়ে রেখেই স্যালাইন দিয়ে গেছেন চিকিৎসক।

ডায়রিয়া রোগী রাকিব জানান, তিনি সদর উপজেলার রাজাপুর থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী থেকে আসা রাবেয়া বলেন, ছয় বছর বয়সী মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু বেড নাই, খুব বেকায়দায় আছি।

ভোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসরিন আক্তার বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের চাপ বেশি থাকায় সেবা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে ডায়রিয়ার ১০টি বেডে বর্তমানে রোগী আছে ১৩৩ জন। আর আমাদের নার্স রয়েছেন মাত্র দুজন। তবু আমরা রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, এপ্রিল মাস ডায়রিয়ায় আক্রান্তের মৌসুম। একটু অসতর্ক হলেই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ-স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। আশা করি সহজেই এই প্রকোপ মোকাবিলা করা যাবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ