নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গরম ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে বোরো ফসলের জমিতে ‘হিট শক’ হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৪ এপ্রিল বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০ পর্যন্ত চলে বৃষ্টিহীন এই তাণ্ডবলীলা। এতে উপজেলার বিভিন্ন বিলে ও হাওরের প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। তবে স্থানীয়দের মতে, ক্ষতি পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

এদিকে বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শনে যান কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে ডিজি মো. আসাদুল্লাহ ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি মো. শাহজাহান কবির।

এর আগে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) একটি বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী দল এসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জমি দেখে পরামর্শ দেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার গরম ঝোড়ো হাওয়ার পর সোমবার সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের বোরো ফসলের ধানে শীর্ষ সাদা হয়ে শুকিয়ে যেতে দেখতে পায় কৃষক। একে একে চারদিক থেকে ফসল জ্বলসে যাওয়ার খবর আসতে থাকে কৃষি অফিসে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত হওয়ার ধানি জমির ছবি আপলোড দেন স্থানীয়রা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে কেন্দুয়া উপজেলায় ২১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়। এর মধ্যে কান্দিউড়া ও মোজাফরপুর ইউপির হাওড়ে হাইব্রিড জাতের ১০০ হেক্টর ও উফশী জাতের ৯৩০ হেক্টর এবং বিল ও ছোট হাওড়ের ২০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির মধ্যে হাইব্রিড ২৭৫০ হেক্টর , উফশী ১৭৯৬৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৩৫ হেক্টর আবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমিতে ধানের শিষ দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ধান আধা পাকা পর্যায়ে রয়েছে।

রোববার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বয়ে যাওয়া গরম ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে উপজেলাজুড়ে বোরো ফসলের জমি হিট শকে ব্যাপক আক্রান্ত হয়েছে। হাওড়ের পর হাওড়েরের ফসলের মাঠ শুকিয়ে সাদা রং ধারণ করেছে। সকালবেলায় কৃষক ক্ষেতে গিয়ে দেখতে পান ধানের শিষগুলো ক্রমেই সাদা হয়ে যাচ্ছে।

স্বপ্নের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া কৃষকরা ক্ষেতের আলেই কান্না ভেঙে পড়েন। বাম্পার ফলনের অপেক্ষায় থাকা বিস্তীর্ণ মাঠের করুণ দশা প্রত্যক্ষ করে মর্মাহত হন তারা। যেসব ধানের এখনো শিষ বের হয়নি অর্থাৎ বুটিং ও হেডিং পর্যায়ে আছে, সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে প্রতিনিধিদল।

তাই ওই সকল স্টেজে থাকা ধানের ক্ষেতগুলোতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা এবং ম্যাজিক স্প্রে (১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম এমওপি সার, ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ২০ গ্রাম চিলেটেড জিংক) জমিতে প্রয়োগ করতে পরামর্শ প্রদান করেছে দলটি। এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা ধানগাছগুলো কিছুটা শক কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করে বিশেষজ্ঞ দল।

কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম শাহজাহান কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, হিট শকে উপজেলার ৩ হাজার ২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞ দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ে সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (জিডি) ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি মহোদয়গণ পরিদর্শন করেছন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা ছাড়াও জেলার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলাসহ নেত্রকোনা হাওরাঞ্চলের ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি বোরো জমির ধান হিট শকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেত্রকানা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ