ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর মন্দিয়া গ্রামের তিন ভাই সাইফুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম ও মমিন ইসলাম। তারা জন্মগত অন্ধ। স্বাভাবিক জীবনের মধ্যে না থাকলেও বাড়ির পাশে ছোট একটি দোকান চালিয়ে জীবন চলতো তাদের। কিন্তু পরপর তিনবার দোকান চুরি হওয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। 

সর্বশেষ গত সপ্তাহের মঙ্গলবার ফের দোকান চুরি হলে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মজুমদার। দোকানের সকল মালামাল নতুন করে তুলে দিয়ে আর্থিক সহযোগিতা করেন তিনি। এমন সহযোগিতা পেয়ে নতুন জীবন শুরু করতে ফের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিন অন্ধ সহোদর।

বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে তিন সহোদরকে ব্যবসার পুঁজি ও মালামাল প্রদান করেন মিজানুর রহমান মজুমদার। এ সময় তিনি তাদের খোঁজখবর নেন এবং আগামীতে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম দোকান ঘরটি পাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

এমন উপহার পেয়ে আপ্লুত তিন সহোদর। তারা বলেন, আমরা কর্ম করে খেতে চাই। কারও কাছে ভিক্ষা চাইনা। কিন্তু চোর এসে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। চলার মত আর কোনো উপায় ছিল না। দোকানে মালামাল তুলে দেওয়াতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। তবে আগামীতে চুরি বন্ধে দোকান ঘরটি পাকা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।

উপকার ভোগীদের একজন সাইফুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, জীবনের একমাত্র সম্বল এ দোকান। কারও কাছে ভিক্ষা চাই না আমরা। তবুও কিছু লোক আমাদের ক্ষতি করতে আসে। একবার দুইবার না, তিনবার চুরি হয়েছে। আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য যা অনেক বড় ক্ষতি। এলাকায় চুরি বন্ধে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

তাদের মা সখিনা বেগম বলেন, ছেলেদের কষ্ট করে মানুষ করেছি। তারা কর্ম করে খায়। কিন্তু চোর আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আজকের এ উপকার আমরা কোনোদিন ভুলবো না।

এ বিষয়ে মিজানুর রহমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্ধ হলেও তারা কর্ম করে জীবনযাপন করেন। কিন্তু তাদের দোকান এতবার চুরি হওয়া কখনও সভ্য কাজ হতে পারে না। মাদকাসক্ত কোনো ব্যক্তি এ কাজ করতে পারে। আমি এটি শুনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’ এর মাধ্যমে দোকানে মালামাল পাঠিয়ে দিয়েছি। ইতোমধ্যে ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের দোকান ঘরটি পাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের সভাপতি মঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, চুরির বিষয়টি জানতে পেরে তাদের সহযোগিতায় আমরা কাজ করেছি। আজকে ব্যক্তি উদ্যোগে উনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। এতে পরিবারটি অনেক উপকৃত হবে।

তিন অন্ধকে এমন সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। মোস্তাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তারা খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করেন। যারা চুরি করেছে তারাও এলাকার বাইরের কেউ নন। এমন কাজ কখনও কাম্য নয়। তবে আজ তাদের সহযোগিতায় সবাই এগিয়ে এসেছে দেখে আমাদেরও ভালো লাগছে।

তারেক চৌধুরী/এএএ