রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানিতে ভেসে আসা একটি অজ্ঞাতনামা যুবকের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা মরদেহের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মমতাজুল হক।

এদিকে পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় মরদেহটি ভেসে এসেছে।  

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তিস্তায় পানি কমতে শুরু করায় স্থানীয় কিছু ছেলে দল বেঁধে নদীতে ঘুরতে যায়। তারা তিস্তার চর ছালাপাকে মরদেহটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিন্টু মিয়া বলেন, আমরা গিয়ে দেখি লাশটি বস্ত্রহীন অবস্থায় পড়ে আছে। আমাদের ধারণা, লাশটি ভারত থেকে আসা পানির তোরে ভেসে এসেছে। নদীতে পানি কমার কারণে এখানে আটকা পড়েছে।

গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মমতাজুল হক বলেন, আমরা খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। এখন পর্যন্ত লাশের কেনো ওয়ারিশ পাওয়া যায়নি। হাতে সুতা বাঁধা দেখে ধারণা করা হচ্ছে সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় মরদেহটি ভেসে এসেছে। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করায় মরদেহটি চরে আটকা পড়ে যায়।

আরও পড়ুন : সিকিমের বন্যায় নিখোঁজ ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ মিলল তিস্তায়

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিছামত ছাতনাই চর থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের একজন। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করে বিজিবি।

প্রসঙ্গত, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে প্রবল বর্ষণের কারণে লোনাক হ্রদ উপচেপড়ায় ওই অঞ্চলে বিপর্যয়কর বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সিকিমের বন্যার কারণে তিস্তার পানির স্তর বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মাঝেই পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তার ঘোলা পানির ঘূর্ণিতে ভেসে আসছে মরদেহ, জুতো, জামাকাপড়, বাসনপত্র, গবাদি পশু থেকে রান্নার গ্যাসের আধভর্তি সিলিন্ডার।

বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিস্তা নদী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ভোর হওয়ার আগেই সিকিমে হড়পা বান আসে। হুড়হুড় করে পানি গড়াতে থাকে তিস্তার খাত ধরে। সিকিমে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির পর সমতলে তিস্তার দু’ধারে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে সেবক থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সমতলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোথায় ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পানি কমার পর স্পষ্ট হবে। গজলডোবা ব্যারাজেরও ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আকস্মিক এ বন্যায় নিখোঁজ ভারতীয় সেনাদের একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া হিমালয়ার ছোট এই রাজ্যে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। নিখোঁজ মানুষের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ জনে। নিখোঁজ এই শতাধিক মানুষের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ২২ জন ভারতীয় সেনাও রয়েছেন। এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস