হত্যা মামলায় ফাঁসির রায় পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষণায় ফাঁসির রায় রহিত করে যাবজ্জীবন সাজা কাটানো বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার গ্রামের বাড়ি গেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও তার ভাই সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। 

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে রাখাল চন্দ্র নাহার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর এলাকায় যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও তার ভাই লতিফ সিদ্দিকী। 

এ সময় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বীর নিবাসে রাখাল চন্দ্র নাহার জন্য আবাসের কাগজপত্র এবং আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তারা। 

এ উপলক্ষ্যে হোসেনপুর গ্রামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, রাখাল চন্দ্র একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাকে মিথ্যা মামলায় যে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তাতে বাঙালি হিসেবে এটা ছিল আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ২০০৮ সালে কাঁধে কাঁধ রেখে আন্দোলন করেছিলাম বলেই একটি মিথ্যা মামলা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা মুক্তি পান। দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের জন্য আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম সবসময় চলবে। 

এ সময় রাখাল চন্দ্র নাহারকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বীর নিবাস এবং আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও কৃষক জনতা লীগের  প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। 

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হোসেনপুর গ্রামে প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র। হত্যা মামলা দায়ের করার পর ওইদিন সন্ধ্যায় দেবিদ্বার থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখাল চন্দ্র নাহারকে গ্রেপ্তার করে। নেপাল চন্দ্র নাহার পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখাল চন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৩ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পায় পরিবার। পরের দিন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ফাঁসির দণ্ড রহিত করার জন্য দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও। পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতিকে এ বীর মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রপতি তা রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন। দীর্ঘ ২৪ বছর কারাভোগের পর চলতি বছরের ২ জুলাই কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন রাখাল চন্দ্র নাহা। 

আরিফ আজগর/এএএ