ময়মনসিংহের নান্দাইলে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষে পাঁচ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ৪৫ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। পরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ সময় কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উভয় দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারের কাছে নিজেদের কাজ ও উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মশালার আয়োজন করে উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। উপজেলা পরিষদের হলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার। উদ্বোধক ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। তবে এ অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাওয়াত দেননি এমপি সমর্থকরা। এই নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এদিন অনুষ্ঠান শুরুর আধা ঘণ্টা আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শাহানের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে গেলে এমপি তুহিনের অনুসারী এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলের লোকজন তাদের বাধা দেন। এতে শুরু হয় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একপর্যায়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের সমর্থকরা এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মেজর জেনারেল আব্দুস সালামের সমর্থকরা। এ সময় মহাসড়কের উভয় দিক থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকা পড়াসহ পাশের বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। একসময় সেখানে ভয়ানক সংঘর্ষ বাধে। এ অবস্থা চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদের হলরুমের কাচের দরজা, জানালা ও সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত দুই শিক্ষার্থীসহ আটজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুপুর পর্যন্ত ৪৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের আটজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। একজন এখানে ভর্তি আছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রোগ্রাম উদ্বোধন করার কথা ছিল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ারের। কিন্তু এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। আমাদের ধারণা ছিল যে প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার উপজেলা পরিষদে এসেছেন। এই ভেবে আমরা পরিষদের সামনে যাই। উদ্দেশ্য ছিল কবির বিন আনোয়ারকে জিজ্ঞাসা করবো কেন আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এ সময় এমপির সমর্থক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল ও তার লোকজন অন্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তারাও আমাদের পেছনে পেছনে ধাওয়া করে আমাদের ৩০ নেতাকর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে।

এ ব্যাপারে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মশালার আয়োজকদের একজন নান্দাইল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বাহার ঢাকা পোস্টকে জানান, অনুষ্ঠানটিতে প্রবেশের সময় সকলকেই নিবন্ধন করে প্রবেশ করতে হবে। এ নিয়ম মানতে চায়নি অনুষ্ঠানে হঠাৎ আসা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন। পরে সেখানে দায়িত্বরতদের সঙ্গে তর্ক হয়। একপর্যায়ে তারা হামলা চালায়।

এ বিষয়ে জানতে কল দেওয়া হলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায় এবং ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন কল রিসিভ করেননি।

নান্দাইল সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই পক্ষের মাঝে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এই ঘটনায় ৪-৫ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

উবায়দুল হক/এমজেইউ