ময়মনসিংহে স্কুলে যাওয়ার পথে রাখিয়া সুলতানা রিয়া (১৫) নামে এক কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলার ভালুকা উপজেলার বাটাজোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রিয়া উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের বাটাজোড় দক্ষিণপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের মেয়ে। সে বাটাজোড় বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে রিয়া স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মুখোশধারী এক যুবক তার পিছু নেয়। বাটাজোড় এলাকায় পৌঁছানোর পর পেছন থেকে হামলা চালিয়ে রিয়াকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করে মুখোশধারী ওই যুবক। এসময় রিয়া চিৎকার দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলে ওই যুবক পিছন থেকে রিয়ার ঘাড়, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। 

খবর পেয়ে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন রিয়াকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক রাকিব হাসান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটি মারা গেছে। নিহতের ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

রিয়ার মা মাজেদা খাতুনের অভিযোগ, স্বামীর বাড়িতে যেতে রাজি না হওয়ায় তার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, সুরতহালে নিহতের পিঠের দিকে অনেকগুলো কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ছাত্রীটির শাশুড়িকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার স্বামীও প্রবাসে। কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধীকে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।  

নির্যাতন করা হতো বাল্যবিয়ের শিকার রিয়াকে

জানা গেছে, এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে সৌদি প্রবাসী রিপন মিয়ার সাঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া রিয়াকে রেখে বিয়ের পরদিন প্রবাসে চলে যায় স্বামী রিপন। স্বামী বাড়িতে না থাকায় পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে প্রায়ই কলহ চলত রিয়ার। রিয়ার শাশুড়ি খতেমন নেছা তার ওপর নির্যাতন চালাত। এমনকি কয়েলের আগুন দিয়ে হাত পুড়িয়ে দেওয়ার মতো নির্যাতনও করা হয় বলে অভিযোগ আছে। এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ছয় মাস আগে বাবার বাড়িতে চলে যায় রিয়া। 

স্বামীর বাড়ির লোকজন বারবার চেষ্টা করলেও নির্যাতনের ভয়ে রিয়া ওই বাড়িতে যেতে রাজি হয়নি। এরপর আবার স্কুলে যেতে শুরু করে রিয়া। পরিবারের পক্ষ থেকে রিপনের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয় সেই সংসারে আর রিয়াকে দেওয়া হবে না। বাল্যবিয়ের অভিশাপ মুছে আবারও পড়ালেখা করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল রিয়া। কিন্তু তার স্বপ্ন আর পাূরণ হলো না।

উবায়দুল হক/