গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বুড়াইল নদীর ওপর নির্মিত একটি কাঠের সাঁকো পানির স্রোতে ভেঙে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত অর্ধলাখ মানুষ। এ অবস্থায় গত ১০ দিন থেকে জরুরি প্রয়োজনে নদীর দু’পাড়ের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন। দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে সেতু নির্মাণসহ রাস্তা পাকাকরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এতদিন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দা গ্রামে বুড়াইল নদীর ওপর নির্মিত এই কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতেন অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ। 

যোগাযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে একাধিক এনজিও ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় ৩ বছর আগে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর পানির স্রোত ও কচুরিপানার চাপে এই এলাকার পারাপারের একমাত্র ভরসা বুড়াইল নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি ভেঙে যায়। এখন পারাপার হতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন নদীর পাড়ের সাধারণ মানুষজনসহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবসায়ীরা।

শুধু তাই না, এ সাঁকোর পাশেই রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র “তিস্তা সোলার লিমিটেড”। প্রতিদিন এখানকার উৎপাদিত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে এই উপজেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র আলীবাবা থিম পার্ক। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আলীবাবা থিম পার্কের দর্শনার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে বুড়াইল নদীর দুই পাড়ের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজনে মানুষজন ঝুঁকি নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হচ্ছেন।

এই পথে চলাচলকারী মতিন মিয়া নামে একজন বলেন, সাত বছর আগে সম্মিলিতভাবে বাঁশ, কাঠ ও শ্রম দিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন এলাকাবাসি। কিন্তু প্রতি বছরই এই বাঁশের সাঁকো দুর্বল হয়ে যেত যা পরে মেরামত করা লাগতো। তিন বছর আগে এই পথে কাঠের সাঁকো তৈরি করা হলেও গত কয়েকদিন আগে সেটিও ভেঙ্গে গেছে। তিনি দুর্ভোগ এড়াতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

খোর্দ্দা গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এ অবহেলিত এলাকার দিকে কেউ তাকায়নি। কোন রাস্তা পাঁকাও হয়নি। হয়নি কোন সেতু নির্মাণ। তাই অত্রালাকার জীবন যাত্রার মানও বাড়েনি। সেতু নির্মাণসহ খোর্দ্দা ও লাটশালা গ্রামের রাস্তা পাঁকা করনের দাবি জানান তিনি।

তারাপুর ইউনিয়নের জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, রাস্তার বেহাল দশাসহ সেতু নির্মাণ না করায় দীর্ঘদিন থেকে অত্রালাকার লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অনেকেই বিকল্প পথে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করছেন। 

খোর্দ্দা গ্রামের ইউপি সদস্য শাহ আলম মিয়া বলেন, প্রতি বছর এ সাঁকো মেরামত করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এলাকাবাসী, ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপির আর্থিক সহযোগিতায় এ ব্যয় নির্বাহ করা হয়। তাই স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণ করা দরকার। 

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, নদী পারাপারের জন্য। বুড়াইল নদীর পশ্চিমে নিজামখাঁ, ঘগোয়া, চাচিয়া, তালেরহাট, তাম্বুলপুর, পীরগাছা ও পূর্বে চরখোর্দ্দা, চর লাটশালা, চর তারাপুরসহ উলিপুর উপজেলার লোকজন পারাপার হতেন এই সাঁকো দিয়ে। হঠাৎ করে ভেঙে গিয়ে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বুড়াইল নদীতে একটি সেতু নির্মাণ অত্র এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী শামসুল আরেফিন খান বলেন, সাঁকো ভেঙে যাওয়ার খবর লোকমুখে শুনেছি। খোর্দ্দা ও লাটশালা গ্রামে যোগাযোগের জন্য রাস্তা পাকাকরণসহ বুড়াইল নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

রিপন আকন্দ/আরকে