‘জীবনে তো মেলা সাতাও (ঝড়বৃষ্টি) দেকনো, কিন্তুক এমন শিলাবৃষ্টি দেখি নাই। করোনাভাইরাসের মতো একেকটা শিল (শিলাবৃষ্টি) পরছে। হামার ঘরের চালা ফুটা হইচে। ভুট্টা খেত, বোরোর অবস্থাও খারাপ। মেলা মাইনসের ক্ষয়ক্ষতি হইচে। সাতায়োত পড়া শিল বুজি আল্লাহর গজব।’ বলছিলেন ষাট বছর বয়সী হাফিজুল ইসলাম। বুধবার (৭ এপ্রিল) মধ্যরাতের কালবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এ কৃষক।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের তকেয়া কেশবপুর গ্রামে থাকেন হাফিজুল ইসলাম। তার মতো অনেকেই গতকাল বুধবারের কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলাতে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ও ভুট্টা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার পাঁচ শতাধিক বসতঘরের টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। বিভিন্নস্থানে ভেঙে পড়েছে গাছগাছালি। প্রায় এক ঘণ্টার মতো বয়ে যাওয়া ঝড় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে কাঁচা ঘর-বাড়ি ও ফসলের ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র যায়, বুধবার রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দুর্গাপুর, লতিবপুর, পায়রাবন্দ, ভাংনী, বালারহাট, মির্জাপুর, ইমাদপুর, চেংমারী, ময়েনপুর, খোড়াগাছ ও রাণীপুকুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে ব্যাপকভাবে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। এসময় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বড় বড় শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার পাঁচ শতাধিক বসতঘরের টিনের চালা নষ্ট হয়েছে। বেশ কিছু গাছগাছালি এবং ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাঁঠালী নয়াপাড়া গ্রামের আতাউর, আতোয়ার, গোলাপ, জলিল, সেফাউল, রাসেল মিয়া, মওলা, আনারুলসহ আশপাশের গ্রামের অনেকের ঘরের টিনের চাল ফুটো হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বাড়ির চাল উড়ে গেছে। ওই গ্রামের বদিউজ্জামান জানান, শিলাবৃষ্টির কারণে তার ঘরের টিন ফুটো হওয়াতে রাতে থাকতে কষ্ট হয়েছে। এখন পর্যন্ত টিনগুলো পরিবর্তন বা মেরামত করতে পারেননি।

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোশফিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ৪টি ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পেয়েছি। তথ্য সংগ্রহ চলছে। সব ইউনিয়নের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য হাতে আসার পর মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, এবার উপজেলায় ৩৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। বুধবারের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ হেক্টর জমির। আর ভুট্টার ৩ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে অন্তত ২ হেক্টর জমির ভুট্টা নষ্ট হয়েছে। এছাড়া হাঁড়িভাঙা আমের ১ হাজার ৫০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ ৫ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কৃষি বিভাগ।

মিঠাপুকুর ছাড়াও রংপুরের তিস্তা বেষ্টিত গঙ্গাচড়ার উপজেলা বেশ কিছু জায়গাতে বুধবার রাতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তবে তেমন ক্ষয়ক্ষতির খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস