হেফাজত ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের সকল স্থাপনায় বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। সব থানার প্রবেশমুখে ও ছাদে ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জেলার সাতটি থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হঠাৎ এই বিশেষ নিরাপত্তা দেখা গেছে। 

জানা গেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ চলমান সহিংস ঘটনা কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই এই বিশেষ সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি থানার প্রবেশমুখে বালুর বস্তার সাহায্যে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি থানা ভবনের ছাদেও একই কায়দায় নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। 

এদিকে বুধবার (০৭ এপ্রিল) রাতে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক গ্রেফতার হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর পরদিন পুলিশের এমন নিরাপত্তা বলয় দেখে থানায় আগতরা কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন। অনেকে ভবিষ্যত সহিংসতার আশঙ্কায় আতঙ্কিত। 

তবে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হেফাজত ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তারা। হরতাল ও মামুনুল হকের সোনারগাঁয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট তাণ্ডবের পর থেকেই তারা সতর্ক। 

জানা গেছে, কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, ভূমি অফিস, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পুলিশের কাছ থেকে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। 

গতকাল বুধবার (০৭ এপ্রিল) পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় খোদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এসব ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, রাবার বুলেটে সহিংসতা দমানো না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র চালাতে হবে। একই সঙ্গে ওই সভায় পুলিশকে মনোবল শক্ত রাখারও তাগিদ দেন তিনি। 

এছাড়াও ওই সভায় আইজিপির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মামুনুল হকের ঘেরাওয়ের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। তিনি বলেন, মামুনুলকে পুলিশের কাছ থেকেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল। এ কারণেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। 

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জেলায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুনুলের গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে পড়লে গোয়েন্দারা বিশেষভাবে মাঠে ছিলেন। সন্দেহভাজনদের ওপরও বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। 

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছি। 

তিনি বলেন, তাণ্ডব সৃষ্টিকারীরা সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করায় সাধারণ মানুষও এখন এসব দুষ্কৃতকারীদের ব্যাপারে সচেতন। আমরা নারায়ণগঞ্জে যে কোনো মূল্যে অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করবো। 

রাজু আহমেদ/আরএআর