জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ পরীক্ষার ১৩ দিন আগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগে যাদের নাম-ঠিকানা ছিল তারাই নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি বিধি মোতাবেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর আলোকে রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে একজন করে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ১ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ওই মাসের ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচবিবি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে ওই চারটি পদে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগ করেন রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ধরঞ্জী  ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. নুর ইসলাম। এরপর অস্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন নুর ইসলামসহ ওই এলাকার আট ব্যক্তি। লিখিত অভিযোগটি ডাকযোগে পাঠানো হয়। অভিযোগের অনুলিপি জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক, (ডিসি), পাঁচবিবির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ওই নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। তারা নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে পাড়ইল গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে সাইদার ইসলাম, অফিস সহায়ক পদে রায়পুর গ্রামের আলমের ছেলে আশরাফুল ইসলাম, নিরাপত্তাকর্মী পদে রতনপুর গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম ও আয়া পদে আরমানের স্ত্রী কুমকুম আক্তারকে নিজস্ব প্রার্থী ঠিক করে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া হলে যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পাবেন। 

মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করার ১৩ দিন পর গত ৭ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ডে পাঁচবিবি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা। পরদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত ফলাফল শিট নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়। এতে লিখিত অভিযোগে থাকা ওই চার প্রার্থীর নাম উল্লেখ রয়েছে। ফলাফলের পর গত ৯ অক্টোবর অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবারও মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করা হয়। এতে তারা প্রহসনের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

অভিযোগকারী নুর ইসলাম ও মিজানুর রহমান বলেন, চারটি পদে নিয়োগ দিতে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে আমরা আগেই বিভিন্নভাবে নিশ্চিত হয়েছিলাম। পাতানো নিয়োগ পরীক্ষায় ওই চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ডাকযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার পর দেখা যায় আমাদের অভিযোগই সঠিক রয়েছে। 

তারা আরও বলেন, আয়া সবচেয়ে ছোট পদ। সেখানে প্রায় ১১  লাখ টাকা নেওয়ার কথা জেনেছি। তাহলে অন্য বড় পদগুলোতে আরও বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যে হয়েছে বলে ধারণা করছি। এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

রতনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলে এলাহী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে সাইদার ইসলাম, অফিস সহায়ক পদে আশরাফুল ইসলাম, নিরাপত্তাকর্মী পদে রাকিবুল ইসলাম, আয়া পদে কুমকুম উত্তীর্ণ হয়েছেন।

ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ধরঞ্জী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। স্বচ্ছভাবে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। নিয়োগ নিয়ে যারা অভিযোগ করেছিলেন তারা অনুমান নির্ভর কথা বলেছিলেন। অনেক সময় অনুমান নির্ভর কথাও লেগে যায়। এই নিযোগের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে পাঁচবিবি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শিশির কুমার উপাধ্যায় বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা থাকার কথা, কেন তিনি  থাকলেন না তা খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া ডিজির কার্যালয় থেকে চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চম্পক কুমার/আরএআর