অভিযুক্ত সুশান্ত শীল

মাদারীপুরে এক নারীকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন সুশান্ত শীল নামে এক প্রতারক। পরে এই ঘটনায় সুশান্তকে শহরের লেকের পাড়ে জুতা পেটা করেন ওই নারী। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে পৌর শহরের শকুনি লেকপাড়ে এ ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার নতুন মাদারীপুর এলাকার এক নারীর ছেলেকে বিদেশ নেওয়ার প্রলোভন দেখান সুশান্ত। পরে তিনি পাসপোর্ট করার কথা বলে টাকা নেন এবং পাসপোর্ট করার জন্য স্ট্যাম্পে সই লাগবে বলে ওই নারীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন। এরপর সুশান্ত ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ওই নারীকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করে দীর্ঘদিন যাবত ব্ল্যাকমেইল করে তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে আসছিলেন। এমনকি ওই নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগী নারী শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে লেকের পাড়ে সুশান্ত শীলকে ডেকে জুতাপেটা করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নারী বলেন, প্রতারক সুশান্ত শীল প্রথমে নিজেকে মুসলমান দাবি করে নিজের নাম ফারুক খালাসী ও বাবার নাম ওয়াজেদ খালাসী বলে পরিচয় দেয়। পরে জানা যায় তার নাম সুশান্ত শীল। পেশায় নরসুন্দর। সে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি শীলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন যাবত আমার সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। 

ওই নারী আরও বলেন, আমাদের বাসার পাশে তার বাসা থাকায় তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি বিভিন্ন বাসায় কাজ করে আমার সংসার চালাই। আমার স্বামী অসুস্থ। একদিন সে আমার কাছে এসে বলে, ভাবি আপনি ছেলেকে যেহেতু বিদেশ পাঠাবেন আমি তো মানুষ বিদেশে পাঠাই। আপনার ছেলের কাগজপত্র আমাকে দেন আমি পাসপোর্ট করে দেব। এই বলে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার হাজার টাকা নেয়। এগুলো নিয়ে আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্প পেপারে সই নেয়। স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার পর থেকেই তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন। তিনি সবার কাছে বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি তার স্ত্রী। এরকম প্রতারণা করে আমার থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি মুসলিম নারী। সে হিন্দু হয়ে মুসলিম পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছে। আমি সহজ-সরল মানুষ এত কিছু বুঝি না। এমনভাবে ব্ল্যাকমেইল করেছে যে আমার ঋণ পর্যন্ত করা লাগত তার জন্য। আমি মাদারীপুর শহরের বাসায় বাসায় কাজ করে যে টাকাগুলো জমা করেছিলাম সব টাকা সে নিয়ে গেছে। তারপরে আমি এ বিষয়ে লোকলজ্জায় কারো কাছে না বলতে পেরে লেকপাড়ের ওইখানে তাকে ধরি। তখন সে আমার টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমি তাকে জুতাপেটা করি। 

আমি এর সঠিক বিচার চাই প্রশাসনের কাছে। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আমি থানায় অভিযোগ করব। 

স্থানীয় আবির, ওনিল মন্ডল,রাজিবসহ বেশ কয়েকজনে জানান, সুশান্ত বিভিন্ন সময় একাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারনা করেছে। এর আগে সে নাম পরিবর্তন করে আরেক নারীর সঙ্গে এরকম কাজ করেছে। এ প্রতারকের আমরা সঠিক বিচার চাই। 

পথচারী স্বপন বলেন, আমি প্রতিদিন লেকপাড়ে ঘুরতে আসি। আজকে ঘুরতে এসে দেখলাম এক নারী যুবককে জুতা দিয়ে পেটাচ্ছে। বিষয়টি আমি জানার জন্য ওইখানে গিয়ে শুনতে পাই ওই নারীর ছেলেকে বিদেশ নেওয়ার কথা বলে নারীর কাছ থেকে স্ট্যাম্পে সই নেয়। পরে তাকে স্ত্রী দাবি করে ধর্ষণের চেষ্টাসহ বিভিন্ন সময় অর্থ হাতিয়ে প্রতারণা করে চলেছে। এ কারণে ওই নারী তাকে জুতাপেটা করেছে। এরকম লোকের কঠিন শান্তি হওয়ার দরকার। 

রাজৈর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

রাকিব হাসান/আরকে