গেল কয়েক বছরে ঘাঘটের ভাঙনে শতাধিক বসতবাড়ি, আবাদি জমি, সবজিখেত এবং বাঁশঝাড় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এবার হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির ১১০ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন। 

এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে ওই বিদ্যালয়ের আশপাশের অন্তত অর্ধশত পরিবার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিসহ ভাঙনের মুখে পড়া পরিবারগুলোকে রক্ষায় এখনই স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জোড় দাবি স্থানীয়দের।

সরজমিনে উপজেলার মধ্য সাহাবাজ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘাঘট ক্ষরস্রোতা না হলেও মধ্য সাহাবাজ গ্রামের এই অংশে এ নদী আগ্রাসী রূপ নিয়েছে। তাই ভাঙনের মুখে রয়েছে ওই এলাকার একমাত্র মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদালয়টি। নদীর চলমান ভাঙনে বেশ কয়েকটি পরিবারের ইতোমধ্যে অর্ধেক বসতভিটা বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। যেখানে ছিল বিভিন্ন জাতের গাছ-গাছালি, বাঁশঝাড়, গোয়ালঘর ও সবজিখেত।

স্থানীয়রা জানান, শুধু এ বছরেই নয় গেল কয়েক বছর থেকেই আগ্রাসী রূপ নিয়েছে ঘাঘট। ঘাঘট এই অংশে তার গতিপথ পরিবর্তন করে অন্তত ৩০০ গজ পূর্বে সরে গিয়ে এখন স্থানীয়দের মালিকানা জমির ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। যেখানে বিভিন্ন সময়ে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, কয়েক বিঘা ফসলি জমি, অসংখ্য গাছগাছালি, বাঁশঝাড়, মসজিদ, মক্তব ও কবরস্থান। এর কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন নদী খনন (ড্রেজিং) না করাকেই দুষছেন তারা। তাদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের নেতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দফায় দফায় নদী ভাঙনের বিষয়ে বলা হলেও কোনো কাজ হয় না। 

এসময় এই এলাকার ঘাঘট পাড়ের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালের পর থেকেই ঘাঘটের ভাঙনে এই এলাকার বহু বসতভিটা, ফসলি জমি, বাড়িঘরসহ অনেক সবজিখেত নদী গর্ভে বীলিন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার শেষ হয়ে গেছে। এবারে এই এলাকার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ভাঙনের মুখে পড়েছে। এছাড়া আশপাশের অর্ধশত পরিবারের বসতভিটাও রয়েছে ভাঙনের মুখে। ভাঙন রোধে এখনই এবং স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া গেলে হয়তো রক্ষা করা যাবে বিদ্যালয়টিসহ মধ্য সাহাবাজ গ্রামের বাসিন্দাদের। অন্যথায় সবই বীলিন হবে নদীতে। তাতে মুখ থুবড়ে পড়বে এই এলাকার শিক্ষাব্যবস্থা।

মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সজিব মিয়া বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন স্কুল মাঠের সঙ্গে লেগে গেছে। বল খেলার সময় নদীতে বল চলে যায়। নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকদিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ করে দিয়েছেন স্যারেরা। 

ভাঙনের মুখে পড়া মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর নদী একেবারেই স্কুল মাঠের কাছাকাছি চলে এসেছে। খেলাধুলার সময় খেলার বিভিন্ন উপকরণ নদীতে পড়ে যায়। এছাড়া অসাবধানতাবশত বাচ্চারাও নদীতে পড়ে যেতে পারে। আমাদের মাঝে সবসময়ই আতঙ্ক কাজ করছে। এই বিদ্যালয়ে ১১০ জন মতো শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের পড়াশোনা এখন হুমকির মুখে। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এসময় ঘাঘটের ভাঙনের মুখে পড়া মধ্য সাহাবাজ গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ ইসমাঈল হোসেন মন্ডল বলেন, রাক্ষসী ঘাঘটের ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়েছে বহুবার। যেভাবে ভাঙছে দুই একদিনের মধ্যে আবারও সরাতে হবে। নাহলে ঘরবাড়িসহ ঘাঘটের পেটে চলে যাবে।

এসব বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, খুব দ্রুতই সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা-১) আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী সরকারি কাজে বাইরে থাকায় ক্ষুদে বার্তায় বলেন, দ্রুতই লোক (প্রতিনিধি) পাঠাচ্ছি। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমার্জেন্সি জিও ব্যাগ ফেলানোর ব্যবস্থা করব। আমি এলাকায় এলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ ঘাঘট নদীর ওই এলাকা পরিদর্শন করে স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ঘাঘট নদীর সুন্দরগঞ্জ অংশের ওই এলাকাটি ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন কিছুটা বেড়েছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী পদক্ষেপের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বরাদ্দ আসলেই খুব দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।

রিপন আকন্দ/আরকে