নাজমিন শিলা সাংসারিক দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি নিজ হাতে বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরি করেন। আর সেই খাবার অনলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে যায় বিভিন্ন মানুষের হাতে। নিজ জেলার বাইরেও দেশের বিভিন্নপ্রান্তে তার হোমমেড ফুড ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে।  

নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে সাংসারিক কাজের পাশপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে প্রানপণ চেষ্টা করে চলেছেন নাজমিন।  স্বামীর আহসান আলমের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় সংসারে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে ‘স্বপ্ন সিড়ি’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ খুলেছেন তিনি। এই পেইজের মাধ্যমেই খাবারের অর্ডার নিয়ে থাকেন। এখান থেকে নাজমিন প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন। আর এভাবে সাংসারিক ব্যয়ে বড় একটা সাপোর্ট দিচ্ছেন তিনি।

নাজমিন শিলা চুয়াডাঙ্গা শহরের সদর হাসপাতালে এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্বামী আহসান আলমকে নিয়ে বসবাস করেন। তার দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। 

নাজমিন শিলার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন আইটেমের হালুয়া, মাংসের আচার, নাড়ু তৈরি করছেন তিনি নিজ হাতেই। সব থেকে নারকেলের নাড়ু, মাংসের আচার ও ছোলার হালুয়ার চাহিদা বেশি।

এছাড়া তার তৈরি খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিরিঞ্জ পিঠা, ছোলার ডালের বড়ফি, হালুয়া, পুলি পিঠা, পায়েস, নারকেলের নাড়ু, রসুনের আচার, আমের আচারসহ বিভিন্ন আইটেমের আচার, ফ্রোজেন করা খাবার, সামুচা, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, চিকেন মোমো, পটেটো চিপস। চুয়াডাঙ্গার বাইরেও তার হাতে তৈরি এসব খাবার কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, শরিয়তপুর, পটুয়াখালি, ঠাকুরগাঁও, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ জেলা থেকে বেশি অর্ডার আসে বলে জানা নাজমিন।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোট থেকেই আমার রান্নাবান্না দিকে আগ্রহ ছিল। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের খাবার বানানোর ভিডিও দেখি। নিজ প্রচেষ্টায় দুই তিন রকমের রকমের খাবার বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি শুরু করি। ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে শুরু করে। ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রশংসা দেখে আমার মনোবল এবং কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর ১৫-২০ রকম আইটেম নিজ হাতে বানিয়ে অর্ডার নিতে শুরু করি। এখন গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার অর্ডার হচ্ছে। আশা করি আরও বাড়বে। খাবারের আইটেমও বাড়ানো হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার তৈরিকৃত খাবার সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে 'স্বপ্ন সিড়ি' নামে পেইজ থেকে সেল করি। অর্ডারের খাবার নিখুঁতভাবে এবং সঠিক সময়ে ডেলিভারি দেই। এতে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার এবং ব্যবসার প্রসার আরও বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাস্টমাররা অর্ডার করে। তাদের সঠিক সময়ের মধ্যেই কুরিয়ারে খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশপাশে কেউ অর্ডার করলে আমার স্বামী নিজেই ডেলিভারি বয়ের কাজ করেন। তিনি নিজে গিয়ে অর্ডারকৃত খাবার দিয়ে আসেন কাস্টমারদের। তিনি আমাকে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছেন। আসলে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হতে পারেন এটাই তার উদাহরণ। 

স্বামী আহসান আলম বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম প্রত্যকেই খাবার বাড়িতেই তৈরি করেন। তবে তার কাজের আগ্রহ ও তৈরিকৃত খাবারের চাহিদা দেখে উৎসাহিত করি। আমার তিন ছেলে। তাদের লালনপালন ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ একাই করে আমার স্ত্রী। সাংসারিক ব্যয়ের দিক থেকেও সে বড় সাপোর্ট দিছে। তাই অস্বচ্ছল নারীরাও হোমমেড খাবার তৈরি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারে বলে মনে করি।

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন নারীরা ঘরে বসেও মেধা ও পরিশ্রম করে বাড়তি আয় করতে পারে। এতে পরিবারের স্বচ্ছলতা যেমন আসছে তেমনি সংসারে যাবতীয় ব্যয়ে স্বামীর পাশাপাশি তারাও সাপোর্ট দিচ্ছেন। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি নারীদের এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

আফজালুল হক/আরকে