অভিযুক্ত প্রেমিক সৈয়দ আশেক এলাহী

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে এমরান হোসেন (৪০) নামে এক সৌদি প্রবাসীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায়  স্ত্রী, শাশুড়ি এবং স্ত্রীর প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৪ আক্টোবর) বিকেলে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের আজাগরা গ্রামের মুন্সী বাড়ির সৈয়দ মাসুদ মুন্সীর ছেলে সৈয়দ আশেক এলাহী (২৮), নিহত এমরান হোসেনের স্ত্রী ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঝাঁকনী গ্রামের খান বাড়ীর মেয়ে ফারজানা আক্তার (২৪) এবং তার মা নাজমা বেগম (৫০)। 

নিহত এমরান হোসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দালাল বাড়ির আবুল বাসারের ছেলে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুপার সুদীপ্ত রায় জানান, গত ৮ অক্টোবর সন্ধ্যা  সাড়ে ৭টার দিকে চাঁদপুরের  হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মকিমাবাদ এলাকায় আমেনা ম্যানশনে সৌদি প্রবাসী এমরানকে হত্যার ঘটনায় ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আশেক এলাহীকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় যশোর জেলার অভয়নগর থানার নোয়াপাড়া এলাকা থেকে আটক করা হয়। এমরানের স্ত্রী ফারজানাকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ফারজানার মা নাজমাকে হাজীগঞ্জ উপজেলার আলীগঞ্জ থেকে আটক করা হয়। তাদেরকে ঘটনার পর থেকে পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারজানা আক্তারের সঙ্গে সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুর দীর্ঘদিন প্রেম ছিল। এ নিয়ে সালিশ বৈঠক ও থানায় অভিযোগ হওয়ার পর স্ত্রী ফারজানা আক্তার ও তার পরিবার ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না বলেও জানায়। একমাত্র ছেলের কথা ভেবে এমরান স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু এমরান ছুটি শেষে সৌদিতে যাওয়ার পর তার স্ত্রী আবারও পরকীয়া শুরু করেন। এরপর এমরান দুই মাসের ছুটিতে দেশে আসলে স্ত্রী ও তার প্রেমিক মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। 

গত ৮ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এমরান ডালপুরি কিনে বাসায় ফেরার সময় আশেক এলাহীকে একটি ট্র্যাভেল ব্যাগসহ বাসার সামনে ঘুরাঘুরি করতে দেখে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তারা উভয়ে বাসার দরজার সামনে এসে নক করলে ফারজানা আক্তার দরজা খুলে দেন। আশেক এলাহী ইশারা দিয়ে এমরানের গলা কেটে দেওয়ার ইঙ্গিত দিলে ফারজানা তাতে সায় দেন। ফারজানা অন্য কক্ষের দরজার আড়ালে চলে গেলে আশেক এলাহী পেছন থেকে ছুরি দিয়ে এমরানের গলায় কয়েকটি পোঁচ দিলে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। ফের ছুরি দিয়ে তার বুকের বাম পাশে আরও কয়েকটি আঘাত করেন আশেক এলাহী। পরে  ফারজানা ও আশেক এলাহী ঘটনার ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করেন। পরে স্থানীয়রা এসে এমরানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আশেক এলাহী কৌশলে ট্র্যাভেল ব্যাগ ফেলে ছুরি নিয়ে পালিয়ে যান। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বোন রিনা বেগম বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনোয়ারুল হক/আরএআর