ক্ষমতাসীন সরকারের সংসদের শেষ অধিবেশনে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান পরিষদ নেতারা। সংগঠনটির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ হলে তিস্তা অববাহিকার দুই কোটি মানুষের সমর্থন পাবে আওয়ামী লীগ।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য দেন- সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সাদিকুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, বখতিয়ার হোসেন শিশির, মনোয়ারুল ইসলাম, দেলওয়ার হোসেন রংপুরী প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জিলা স্কুল মাঠে গত ২ আগস্ট জনসমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। তিস্তাপাড়ের মানুষ শেখ হাসিনার কথায় আশ্বস্ত হয়ে আছেন। এখন আমরা চাই তার এই মেয়াদের সরকারের শেষ সংসদ অধিবেশনই অর্থ বরাদ্দ দিয়ে মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করা হোক। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার তিস্তা অববাহিকার দুই কোটি মানুষের সমর্থন পাবেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে বড় ভূমিকা রাখবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই অববাহিকার দুই কোটি মানুষের বাঁচা-মরার লড়াই। আমাদের স্লোগান ছিল-কোটি মানুষের স্বপ্ন তিস্তা মহাপরিকল্পনা, স্বপ্ন বুনেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমাদের দাবি ছিল পদ্মা সেতুর মতো নিজের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এখন আমরা চাই এই সরকারের মেয়াদের সমাপনী সংসদ অধিবেশনে তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে দ্রুত এই মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করা হোক।

তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙন ও বন্যায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিজ দেশেই হচ্ছে শরণার্থী। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। তিস্তা তীরের মানুষের মুখেমুখে একটাই স্লোগান- তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও, কৃষকের জান বাঁচাও, তিস্তা খননের কাজ শুরু করো, মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন কর। তিস্তা চুক্তির অপেক্ষায় মহাপরিকল্পনার কাজ ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।

নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলোতে ৩ লাখ কোটি টাকার কাজ চলছে। সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের জন্য ৩৭ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প থাকার কথা ছিল সেটি হয়নি। কোনো কোনো বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে রংপুর বিভাগের জন্য মাত্র ০. ৯৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্য দূরীকরণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। কিন্তু রংপুরের মানুষ বরাবরই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ নিবেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেয়া তিস্তা অববাহিকার শত শত মানুষ ৬ দফা দাবি আদায়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। এ সময় ছয়টি দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনটির নেতারা। তাদের দাবিগুলো হলো- ১. তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ। ২. তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ। ৩. ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন। ৪. তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা। ৫. তিস্তা নদীর শাখাপ্রশাখা ও উপ-শাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দুষণমুক্ত করা। নৌ চলাচল পুনরায় চালু। ৬. মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ