গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে গণপিটুনিতে নিহত সেই সেরেকুলের পুলিশ প্রহরায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। 

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) উদয় কুমার সাহার নেতৃত্বে পলাশবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাত, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মোখলেছুর রহমানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

নিহত সেরেকুল ওই এলাকার প্রবাসী তাহারুলের চার বছরের শিশু বায়েজিদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি।

পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) উদয় কুমার সাহা বলেন, যেহেতু দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একই এলাকায়। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় থমথমে ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলমান রয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ দাফনের জন্য এলাকায় নিয়ে আসার পর যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়নে নিহতের মরদেহের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ঘোড়াবান্দা চৌরাস্তা বাজারের একটি হোটেলে সেরেকুলের অবস্থান টের পেয়ে বালুখোলা গ্রামের সহস্রাধিক উত্তেজিত নারী-পুরুষ সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। উত্তেজিত জনতা এক পর্যায়ে সেরেকুলকে টেনে-হিঁচড়ে হোটেল থেকে বের করে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। পরে স্থানীয়রা অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশে খবর দেয়। পলাশবাড়ি থানা পুলিশ এসে সেরেকুলকে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে পাঠালে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ওই দিনেই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। 

পরে রোববার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে নিহতের ছেলে মোকছেদুর রহমান বিদ্যুৎ বাদি হয়ে পলাশবাড়ি থানায় শিশু বায়েজিদের বাবা তাহারুল ব্যাপারিকে প্রধান আসামি করে আরও ৩৫ জন এবং অজ্ঞাত নামা ১৫ হতে ২০ জনকে আসামি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

প্রসঙ্গত, গত ৮ মে বিকেলে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামের বাড়ির উঠানে খেলার সময় নিখোঁজ হয় শিশু বায়েজিদ। পরে মাইকিং করেও সন্ধান না মেলায় পরদিন ৯ মে মঙ্গলবার সকালে পলাশবাড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন বায়েজিদের মা রায়হানা বেগম। তাতেও সন্ধান না মেলায় ১০ মে রায়হানা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করে পলাশবাড়ি থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।

একইদিন ঘটনায় সন্দেহভাজন সাইফুল ইসলাম ওরফে সিরিকুলের ছেলে সাকিব হাসান ওরফে রোমান (১৯) ও সোহরাব হোসেনের ছেলে শরিফুল ইসলামকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। রোমান ও শরিফুলকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক তথ্য না দেওয়ায় ওই দিনেই (১০ মে) আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেন তৎকালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বুলবুল আহমেদ।

এরমধ্যই নিখোঁজের ৫ দিন পর শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে স্থানীয়দের খবরে একই এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে শিশু বায়েজিদের মস্তক বিচ্ছিন্ন ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশি রিমান্ডে সাকিব হাসান ওরফে রোমান (১৯) ঘটনার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

এর দুইদিন পর ১৬ মে দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানায়, শিশু বায়েজিদের বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষোভে ৪ চার বছরের বায়েজিদকে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রেমিক সাকিব হাসান ওরফে রোমান।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে রোমান দাবি করে, নিহত বায়েজিদের বোন তিশা আক্তারের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর তিশা রোমানের থেকে দূরে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। পরে তিশার পরিবার তিশাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রোমান এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়।

ওই মামলায় মোট ১০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামি সাকিব হাসান ওরফে রোমান বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। ওই মামলার অন্য আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন। মামলার অভিযোগপত্র এখনও আদালতে জমা দেওয়া হয়নি।

রিপন আকন্দ/এএএ