দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপু

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা বাবুল হাসান (২৪) আওয়ামী লীগের দলীয় একটি অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে তার দরিদ্র পরিবারের যেকোনো শিক্ষিত একজন সদস্যকে চাকরির আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সেই সুযোগে দরিদ্র পরিবারটির কাছ থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপুর বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা বাবুল হাসান ২০২২ সালের ১৮ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের দলীয় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি ওই অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের আতারস্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাকচাপায় নিহত হন। বাবুল হাসান দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের পূর্ব মাগুরী হাট এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি চিকাজানী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বাবুলের মা-বাবা, তিন ভাই ও দুই বোন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। ফলে স্থানীয় সংসদ সদস্য (আবুল কালাম আজাদ) পরিবারের যেকোনো শিক্ষিত একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি নিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

বাবুলের মা ছখিনা বেগম অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের অনুষ্ঠানে গিয়ে মারা গেছে ছেলেটা (বাবুল হাসান)। ছেলেই সংসার চালাত। ছেলের মৃত্যুতে আমাদের চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে। বড় ছেলে সোলাইমান মাস্টার্স শেষ করে বেকার। এমপি সাহেবের আশ্বাসে বড় ছেলের একটি চাকরির জন্য যোগাযোগ করি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার হয়। আবারও এমপি সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন এমপি সাহেব ছেলেকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আসতে বলেন। আল্লাহর রহমতে ছেলে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে। পরে আবার এমপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করা হয়। তখন এমপি সাহেব দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে মেয়রের সঙ্গেও কথা হয়। হঠাৎ একদিন মেয়র এক লোকের মাধ্যমে বড় ছেলে সোলায়মানকে দেখা করতে বলেন।

ছখিনা বেগম আরও বলেন, চাকরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেয়র আমার ছেলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চান। তখন ছেলে মেয়রকে বলেন, এত টাকা কোথায় পাব। তখন মেয়র বলেন, টাকা দিলে তোমার চাকরি শতভাগ নিশ্চিত। পরে সোলায়মান বাড়িতে ফিরে আমাদের বিষয়টি জানালে সরকারি চাকরি নিশ্চিত হবে এই ভেবে আমরা চাষাবাদের একমাত্র জমি ও দুটি গরু বিক্রি করে এবং কিছু টাকা ধারদেনা করে দুইবারে চার লাখ টাকা মেয়রকে দিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের চাকরি আর হয়নি। পরে টাকা ফেরতের জন্য মেয়রের কাছে গেলে তিনি বলেন, চাকরির জন্য টাকা নাকি তিনি অন্য মানুষকে দিয়েছেন, এই বলে টাকা ফেরত দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

নিহত বাবুলের বাবা আবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। ছেলে মারা যাওয়ার পর স্থানীয় এমপি আমার বড় ছেলেকে চাকরি দিতে চান। তার (এমপি) সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেন। কিন্তু মেয়র চাকরির জন্য আমাদের কত কষ্টের টাকাগুলো নিয়ে আর ফেরত দিলো না। টাকাগুলো ফেরত দিলে আমরা আবার চাষাবাদ করে চলতে পারতাম।

এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সে (সোলায়মান) আমার কাছে চাকরির জন্য আসত। একদিন তাকে বলি, চাকরি পেতে গেলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। এ কথা শুনে সে চলে যায়। এর পর সে আর আমার কাছে আসেনি। আমি তার কাছে টাকা নিয়েছি, এই কথা মিথ্যা। আমি কোনো টাকা নিইনি।

রকিব হাসান নয়ন/এমজেইউ