রংপুরের কাউনিয়ায় ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়কে মাটি না থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের। সেতুতে উঠতে এখন আলাদা বাঁশ-কাঠে গড়া সংযোগ সাঁকোই ভরসা। এ কারণে চলাচলকারী লোকজন এ সেতুর নাম দিয়েছেন ‌‘অচল সেতু’।

জানা গেছে, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে ২০১০ সালে ইউএসএ আইডির অর্থায়নে ও কেয়ার বাংলাদেশের সহযোগিতায় চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বন্যার পানির তোড়ে নির্মিত সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে সেতুতে উঠতে সংযোগ সড়কের বিকল্প হিসেবে সেখানে তৈরি করা হয় একটি সাঁকো। বর্তমানে নড়বড়ে ওই সাঁকো দিয়ে সেতুতে উঠে দুইপাড়ে যাতায়াত করছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। 

স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণের প্রায় ৫ বছর পরে বন্যার পানির স্রোতে দুইপাড়ের মাটি ধসে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেখানকার লোকজনদের। কিন্তু গত পাঁচ বছর সংযোগ সড়ক নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। এমন অবস্থায় সেতু পার হতে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো ব্যবহার করছেন স্থানীয় লোকজন।

ওই সেতু হয়ে প্রতিদিন স্থানীয় গোপীডাঙ্গা, আরাজী খোর্দ্দ ভূতছাড়া, মৌলভীবাজার গ্রামের লোকজন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছেন। এছাড়াও লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের ভরসা এই সেতুটি। স্থানীয়দের দাবি, সেতুটির দুইপাশে ধসে যাওয়া মাটির সংযোগ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে মূল সেতুর সঙ্গে চলাচল উপযোগী করা হোক। 

গোপীডাঙ্গা গ্রামের হযরত আলী বলেন,‘ হামার কপাল খারাপ বাহে। মেলাদিন পর একটা সেতু হোইল। কিন্তুক সমস্যা থাকি গেলো। হামার পাকা সেতুত উঠতে এ্যলা বাঁশ-কাঠের নড়বড়া সাঁকো ছাড়া উপায় নাই। মেলাবছর ধরি চেয়ারম্যান মেম্বারোক কওচি সেতু কোনা ঠিক করা নাগবে কিন্তু কায়ো হামার কথা শোনে না।’

মৌলভীবাজার গ্রামের কৃষক মমিনুর, রাসেল ও জাফর মিয়া জানান, তিস্তা নদীর বন্যার পানির স্রোতে সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গিয়ে সেতু হেলে পড়েছিল। তাই এলাকার মানুষেরা নিজেদের উদ্যোগে সেতুতে চলাচল করতে উভয় প্রান্তে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু দিয়ে লোকজন যাতে চলাচল করতে পারে, এর জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। কোনো প্রতিকার মেলেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় ভোটের লোভে সড়ক ও সেতু সংস্কার করার আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ খোঁজ রাখেন না। সাধারণ মানুষ উন্নয়নের আশায় বুক বেঁধে এমপি নির্বাচিত করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশিকে। তিনি পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার তিনবারের এমপি ও বর্তমানে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে ঘিরে অনেক আশা করা হলেও তিনি চরাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেননি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সেতুটির সংযোগ সড়কের সংস্কার করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে কাউনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, সেতুটির বিষয়ে আমরা এরই মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে সেতুটির কাজ করা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ