হেমন্তের বিকেলে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশিতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় নৌকার বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর মাঝি মাল্লাদের নাচ গানে মুখরিত হয়ে উঠে কাপ্তাই হ্রদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে এই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উনয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় ও রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই নৌকাবাইচের আয়োজন করে।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ দেখত দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের ঢল নামে কাপ্তাই হ্রদের শহিদ মিনার তীরে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে শুরু করে আশপাশের সব এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ নৌকাবাইচ দেখত ভিড় করেন।

এদিকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উপজলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুসজ্জিত নৌকা নিয়ে প্রতিযোগীরা অংশ নেন। প্রতযোগিতায় পুরুষ দলের পাশাপাশি নারী দলও অংশ নেয়। যা প্রতিযোগিতায় ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করে। তাদের দলগত অংশগ্রহণ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পুরুষের সঙ্গে নারীদেরও এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়।

কাপ্তাই উপজেলা থেকে নৌকাবাইচ দেখত আসা পরানী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এ বছরই প্রথম নৌকাবাইচ দেখত এসেছি। সবার মুখে মুখে শুনেছি নৌকাবাইচের কথা, তাই দেখতে এলাম। খুবই ভালো লাগছে। প্রচুর মানুষ। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সময় কাটছে।

বিলাইছড়ি উপজলা থেকে নৌকাবাইচ দেখত আসা বাবুল চাকমা বলেন, প্রতি বছরই আমাদর এলাকা থেকে এই প্রতিযোগিতা দেখতে আসি। আমাদের পাড়া থেকে পুরুষ ও মহিলা দল অংশ নেয়। সকলেই বোট নিয়ে এখানে এসেছি। তাদের সঙ্গে আমিও এসেছি নৌকাবাইচ দেখতে।

চার ভাগে নৌকাবাইচ প্রতিযাগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুইজনের মহিলা ডিঙ্গি নৌকায় প্রথম স্থান অর্জন করে শর্মিলা ত্রিপুরার দল। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে শেফালী চাকমার দল। তৃতীয় স্থান অর্জন করে পদ্মা দবীর দল। পুরুষ দুইজনের সাম্পানে প্রথম স্থান অর্জন করে মো. জামাল উদ্দিনের দল। দ্বিতীয় স্থান অর্জন কর জলকান্তি ত্রিপুরার দল ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে মো. জিহাদের দল। 

এছাড়াও ১৫ জনের মহিলা বড় নৌকায় প্রথম হয় সুমিতা ত্রিপুরার দল, দ্বিতীয় হয় আলা ত্রিপুরার দল ও তৃতীয় হয় চিকনা ত্রিপুরার দল। ২১ জনের পুরুষ বড় নৌকায় প্রথম স্থান অর্জন করে চিরমনি ত্রিপুরার দল, দ্বিতীয় স্থান অর্জন কর শংকর ত্রিপুরার দল ও তৃতীয় স্থান অর্জন কর প্রশান্তি ত্রিপুরার দল। অনুষ্ঠানে বড় নৌকায় প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে ৩৫ হাজার ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতা শেষে জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত  থেকে পুরস্কার তুলে দেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। 

মিশু মল্লিক/আরএআর