রাজবাড়ীতে চলতি বছরে ২৮ লাখ টাকার ট্রান্সফরমার চুরি
রাজবাড়ীতে বেড়েই চলেছে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা। বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজসেই প্রতিনিয়ত এসব চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো গ্রাহকদেরই এ নিয়ে আরও সতর্ক হতে বলছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। জেলার পাঁচ উপজেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত চুরি হয়েছে ৪৯টি ট্রান্সফরমার, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, দক্ষ না হলে কারও পক্ষে এসব ভারি ট্রান্সফরমার বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চুরি করা অসম্ভব। এ চুরির সঙ্গে সমিতির অসাধু কর্মচারীরা জড়িত বলে ধারণা তাদের। ট্রান্সফরমারে মূল্যবান তামার কয়েলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকে। মূলত দামি কয়েলের কারণেই চুরি হয় এসব ট্রান্সফরমার।
গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর ও গোপিনাথদিয়া গ্রামে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চুরি হয় দুটি ট্রান্সফরমার। এতে বিপাকে পড়েন এর আওতাধীন অন্তত ৪০টি পরিবার। বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে তাদের। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশাভ্যান চার্জ দিতে পারছেন না তারা। এর ওপর আবার তাদের মাথায় ভর করেছে নতুন ট্রান্সফরমারের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে টাকা জমা দেওয়ার দুশ্চিন্তা।
বিজ্ঞাপন
ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক আমেনা খতুন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। ট্রান্সফরমার চুরি হওয়াতে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন আমাকে ১ হাজার ৭০০ টাকা জমা দিতে বলেছে। আমার পক্ষে হুট করে এত টাকা দেয়া অনেক কষ্টের। আমার ওপর জুলুম করা হচ্ছে।’
জুলমত নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘একটি ট্রান্সফরমারের ওজন অনেক। এত বড় একটা জিনিস কীভাবে চুরি হয়! আর সাধারণ কোনো মানুষ এটি খুলতে গেলে কারেন্টের শক খেয়ে মারা যাবে। আমাদের ধারণা, এ চুরির সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জড়িত। কারণ, যার অভিজ্ঞতা আছে সেই এ কাজ করতে পারে।’
রাজবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘চলতি বছরে ৪৯টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছি। তবে এ পর্যন্ত চুরির সঙ্গে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উদ্ধার করা যায়নি চুরি হওয়া কোনো ট্রান্সফরমার।’
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি.এম.আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আর এ ব্যাপারে থানায় কোনো মামলাও হয়নি। ফলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। নিশ্চয়ই একটি চক্র ট্রান্সফরমারগুলো চুরি করছে। যেহেতু আমি শুনলাম, এখন থেকে প্রত্যেকটি ঘটনাতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
মীর সামসুজ্জামান/আরকে