দীর্ঘ ৪৫ দিন কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে থাকার পর ভেসে উঠেছে সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সেতুর পাটাতন থেকে হ্রদের পানি নেমে গিয়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করে সেতুটি। এরই মধ্যে পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতুতে প্রবেশ করেছে।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সরেজমিনে ঝুলন্ত সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, হ্রদের পানি সেতুর পাটাতন থেকে নেমে গিয়ে সেতুর নিচে ছুঁই ছুঁই করছে। দীর্ঘদিন পানির নিচে ডুবে থাকায় সেতুর পাটাতনের অনেক কাঠ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। সেতুতে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ধুয়ে পরিষ্কার করার পাশাপাশি পর্যটন কর্পোরেশন সেতুর নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশগুলো মেরামত করছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাঙামাটিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় উজানের ঢল বন্ধ রয়েছে। এতেই হ্রদের পানি কমে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুটি।

চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নুরুল আমিন বলেন, আমরা ফেসবুকে জানতে পেরেছিলাম ঝুলন্ত সেতু পানিতে ডুবে গেছে। তাই রাঙামাটি বেড়াতে আসার প্ল্যানটা বাতিল করেছিলাম। পূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে বেড়াতে এসেছি, এসেই জানতে পারি সেতু থেকে পানি নেমে গেছে। তাই সবার আগে ঝুলন্ত সেতুতেই বেড়াতে আসলাম। সেতুর ওপর হাঁটতে পেরে ভালো লাগছে।

নরসিংদী থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক শিবলু তালুকদার বলেন, আমরা জানতাম ঝুলন্ত সেতু পানির নিচে চলে গেছে। কিন্তু আজ সকালে রাঙামাটি নেমেই জানতে পারলাম ব্রিজ থেকে পানি সরে গেছে। তাই আমরা সবাই ব্রিজে এসেছি। এখানে ঘোরা শেষ হলে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে বের হব। সেতুটি দেখতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

রাঙামাটি ট্যুারিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, গত কয়েক বছর বর্ষায় বৃষ্টি কম হওয়াতে সেতু না ডুবলেও এবারের ভারি বৃষ্টিপাতে সেতু ডুবে গিয়েছিল। এতে আমরা ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হই। যেহেতু রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে ঝুলন্ত সেতু প্রধান আকর্ষণ তাই এতদিন বেড়াতে আসা পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতুর আনন্দ উপভোগ না করে হতাশ হয়ে ফেরত যেতে হয়েছে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়াতে গতকাল থেকে সেতু ভেসে উঠেছে। সপ্তাহিক বন্ধ ও পূজার ছুটি মিলিয়ে মোটামুটি ভালোই পর্যটক সমাগম হয়েছে। এখন থেকে পর্যটক সমাগম বাড়বে বলে আশা করছি।

হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দীন বলেন, এতদিন যারাই রাঙামাটি বেড়াতে আসতেন সবাই আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করতেন ঝুলন্ত সেতু থেকে কবে পানি নামবে। পর্যটকদের অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে রাঙামাটি থেকে। পর্যটক উপস্থিতিও কমে গিয়েছিল। ঝুলন্ত সেতু ভেসে ওঠায় পর্যটক সমাগম আবার বাড়বে এবং এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আবারও আগের মত ব্যবসায়িক লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা বলেন, দীর্ঘদিন ডুবে থাকার পর আবারও ভেসে উঠেছে ঝুলন্ত সেতু। এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ। এতদিন পর্যটকদের ঝুলন্ত সেতুতে না উঠেই ফেরত যেতে হয়েছে। এবার থেকে আর কাউকে হতাশ হয়ে ফেরত যেতে হবে না।

তিনি আরও বলেন, ঝুলন্ত সেতুতে আমরা পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য মেরামত ও রং করা এবং ত্রুটিপূর্ণ অংশগুলো ঠিক করেছি। এতদিন ব্যবসায়ীরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন এবার সেটা থেকে উত্তরণ হওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে যেতে শুরু করে ঝুলন্ত সেতু। দীর্ঘ ৪৫ দিন পানির নিচে থাকার পর আবারও ভেসে উঠেছে সেতুটি।

মিশু মল্লিক/আরকে