ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগে মোবাইল ফোনে বাসায় ডেকে নিয়ে জামাল মিয়া (৪১) নামে এক হ্যান্ড ট্রলি চালককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরকীয়া প্রেমিকার স্বামী, সন্তানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পলাতক রয়েছেন ওই নারী। তবে নিহতের স্ত্রীর দাবি, তার স্বামীর পরকীয়া প্রেম ছিল না। তাকে শত্রুতাবশত হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

নিহত জামাল মিয়া গৌরীপুর পৌরসভার কালীপুর মধ্যতরফ কলাবাগান ছয়গন্ডা মহল্লার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি পেশায় হ্যান্ড ট্রলি চালক।

জামাল মিয়া শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে যান নিজের বাসায়। বলতে থাকেন পাশের পূর্বদাপুনিয়া মহল্লার শরীফ আমাকে মেরেছে। রক্তাক্ত অবস্থায় জামালকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।পূর্বদাপুনিয়া মহল্লার মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. শরীফ হোসেনের বাসায় জামালকে মাথায় ও মুখে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। ঘরের ভেতর থেকে রক্তমাখা আলামতও জব্দ করেছে পুলিশ।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র বলছে, জামালের হ্যান্ড ট্রলিতে কাজ করত শরীফের ছেলে সজীব মিয়া। এ কারণে শরীফের বাসায় জামাল মিয়া নানা সময় আসা-যাওয়া করতো। সেই সুবাদে শরীফের স্ত্রী শামছুন্নাহারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে জামালের। রাত ২টার দিকে নারীর ঘরে জামালকে পাওয়া পরকীয়াকে ইঙ্গিত করে। রাতে ঘরে পাওয়ায় জামালকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। 

জামাল অন্তত ৬ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন পাশের পূর্ব দাপুনিয়া গ্রামের সনিয়া আক্তারকে। তাদের সংসারে কোনো সন্তান নেই। গত কয়েকদিন আগে সনিয়া বাবার বাড়িতে বেড়ানে যান। শুক্রবার রাতে বাড়িতে ছিলেন না তিনি। মধ্যরাতে স্বামীর রক্তাক্ত অবস্থার খবর পেয়ে যান হাসপাতালে।

সনিয়া আক্তার বলেন, রাত ২টার পর বাড়ির কাছের মোড় থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে শরীফ হয়ত আমার স্বামীকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তারা মাথায় ও মুখে কুপিয়ে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে বারবার শরীফের নাম বলে গেছেন তিনি। আমার স্বামীর সঙ্গে শরীফের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাই দু’জনের ঘনিষ্ঠ চলাচল ছিল। আমার স্বামীর সঙ্গে শরীফের স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক হতে পারে না। ওই নারীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং নারীর বয়সও অনেক বেশি। অন্য কোনো কারণের হয়ত আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, তবে তা আমার স্বামী বলে যেতে পারেনি। আর হত্যা থেকে বাঁচতে পরকীয়ার ঘটনা রটিয়েছে। 

নিহতের বড়ভাই স্বপন মিয়া জানান, জামাল পাওনা টাকা আনতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

গৌরীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মো. জিয়াউর রহমান জানান, জামালের সঙ্গে শরীফের স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে একাধিকবার সালিশ করে সতর্কও করা হয়েছিল। 

গৌরীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, গভীর রাতে একজন নারীর ঘরে এমনিতে কেউ আসে না। নারীর স্বামী বিষয়টি দেখতে পায়। পরকীয়ার জেরেই হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া যায়। আগে থেকেই প্রেম ছিল এমনটি এলাকাবাসীও জানে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শরিফ হোসেন, তার ছেলে সজীব মিয়া ও অপর সহযোগী কাজী রাহাত মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে নারী পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উবায়দুল হক/এএএ