বগুড়ায় গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা আইনজীবীর সহকারী হাবিবুর রহমানের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। গত বৃহস্পতিবার হাবিবুর রহমানের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সম্পন্ন হয়।

ডা. মিজানুর রহমান বলেন, আইনজীবীর সহকারীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। তার শরীরে কোনো আঘাতের বা নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদন শেষ হওয়ার পরপরই তা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে।

হাবিবুর রহমান শাজাহানপুরের রানীরহাট চকজোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এবং বগুড়া জজকোর্টের আইনজীবী মো. মঞ্জুরুল হকের সহকারী (মোহরার) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আইনজীবী মঞ্জুরুল হক তার আপন মামা। এছাড়া হাবিবুর রহমান জেলা আইনজীবীর সহকারী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শহরের জজকোর্ট চত্বর থেকে শাজাহানপুর উপজেলার চকজোড়া এলাকার খুকি বেগমকে হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে হাবিবুর রহমানকে আটক করে ডিবি পুলিশ। কিন্তু আটকের কিছুক্ষণ পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুর রহমান মারা যান।

ওই সময় হাবিবুরের স্বজনেরা অভিযোগ তোলেন, আটকের পর পুলিশের নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের বিষয়ে হাবিবুরের মামা আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, এটা যে স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হবে, তা তো আগে থেকেই জানা। পুলিশের হেফাজতে কোনো মৃত্যু আজ পর্যন্ত অস্বাভাবিক হয়েছে এমন কি দেখেছেন? হাবিবুরের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ আগেই ম্যানেজ করেছে।

আইনগত ব্যবস্থার প্রসঙ্গে মঞ্জুরুল হক বলেন, আমাদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এখনও চলে যায়নি। আমরা অবশ্যই আইনগত প্রক্রিয়ায় যাব।

হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর পরের দিন জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের মেয়াদ দেওয়া হয় সাত কার্যদিবস।তবে সেই মেয়াদ আরও সাত কার্যদিবস বাড়ানো হয়েছে বলে জানান কমিটির প্রধান বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার। তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত শেষের দিকে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দশ বছর আগে শাজাহানপুরের জোড়া তালপুকুর এলাকায় বিপুল নামের এক কিশোরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। সেই হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন হাবিবুর রহমান। ওই হত্যার ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন অপহৃত কিশোরের সৎ মা খুকি বেগম। কিছুদিন পরেই খুকি বেগমের সাক্ষ্যের তারিখ ছিল। কিন্তু গত ২ আগস্ট খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়। ৪ আগস্ট তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার হয়। তবে ৮৫ বছরের এই বৃদ্ধার দুটি পা নিখোঁজ ছিল। একটি পা পাশের একটি পুকুরে পাওয়া যায়। আরেকটি পা একই এলাকার মনোয়ারা নামে একজনের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মনোয়ারাকে সন্দেহভাজন হিসেবে নিয়ে এলে তখন হাবিবুরের নাম উঠে আসে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে হাবিবুর রহমানকে আটক করা হয়। কিন্তু মনোয়ারার সামনে হাবিবুর রহমানকে আনা হলেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাতে তিনি মারা যান।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/আরকে