ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার একবারে দক্ষিণে অবস্থান আনন্দপুর ইউনিয়নের। এ ইউনিয়নের লমোপড়া এলাকায় দেশ স্বাধীনের পর থেকে ৫৫টি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার বসবাস করে আসছেন। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতায় দীর্ঘ পাঁচ দশকেও এ জনপদে লাগেনি তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দুর্গোৎসবের ছোঁয়া। তবে এবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পূজা উদযাপন পরিষদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ এলাকায় প্রথমবারের মত দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বইছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেবী বন্দনায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন সেখানের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ধূপ, পঞ্চপ্রদীপ, উলুধ্বনি আর ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে বাজছে শঙ্খনাদ। মণ্ডপে উচ্চারিত হচ্ছে পুরোহিতের মন্ত্রধ্বনি। 

আনন্দপুর ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ক্ষুদিরাম শর্মা বলেন, এখানকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে এবার নিজেদের আঙ্গিনায় দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও পূজা উদযাপন পরিষদের দায়িত্বশীলদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। 

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ অমল দাশ নামে এক ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর পূজা আসলে সন্তানদের এটি নিয়ে একটি আক্ষেপ থাকতো। তারপরও আশপাশের মণ্ডপে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। তবে এবার প্রথমবারের আমাদের নিজ আঙ্গিনায় দুর্গোৎসব আয়োজন সবগুলো পরিবারে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে। আশা করি আগামীতে এখানে একটি স্থায়ী মন্দির হবে।

ফুলগাজী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিপ্লব কুমার দত্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার উপজেলায় ৩৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হচ্ছে। আনন্দপুরে এ মণ্ডপে প্রথমবারের মত পূজা আয়োজন করা হয়েছে। এতে এই এলাকার ৫২ থেকে ৫৫টি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে। পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। 

এদিকে শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকেই ফেনীর বিভিন্ন মণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা সপ্তমী পূজা উদযাপন করেছেন। পূজা উপলক্ষ্যে নানা রঙের পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সী মানুষ মণ্ডপে আসছেন। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদানের মাধ্যমে পূজা শুরু হয়। এরপর দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা।

ফেনী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এবার ফেনীতে মোট ১৪৭টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। তারমধ্যে সদরে ৪৬টি, ফেনী পৌরসভায় ১২টি, সোনাগাজীতে ২৩টি, দাগনভূঞায় ১৯টি, ফুলগাজীতে ৩৫টি, পরশুরামে ৫টি এবং ছাগলনাইয়ায় ৭টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, নিরাপদে পূজা উদযাপনে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপজেলার দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বর্ধিতসভা করে পূজা উদযাপন পরিষদ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ২৪ তারিখ বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পূজা শেষ হবে।

জেলায় পূজা উদযাপনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভা করে করণীয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তায় পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার সদস্য দায়িত্বপালন করছেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

তারেক চৌধুরী/এএএ