বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলী (৭৫)। বিধান অনুযায়ী খবরটি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর কথা। পরে তারা এসে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাবেন। গার্ড অব অনার, জাতীয় পতাকায় কফিন মোড়ানো ও বিউগলের করুণ সুর বাজাবেন। সবশেষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। কিন্তু সেসবের কিছু না করেই দাফন করা হয়েছে রণাঙ্গনের সৈনিক জুনাব আলীকে।

শনিবার (২১ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ফাল্গুনকরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলী। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অফিসকে জানানো হয়। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

২০২০ সালের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন জাতীয় পতাকা দ্বারা আবৃত করতে হবে। তবে সৎকার বা সমাধিস্থ করার আগে জাতীয় পতাকা খুলে ফেলতে হবে। সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধি কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুমোদিত সংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা সশস্ত্র সালাম প্রদান করবেন এবং বিউগলে করুণ সুর বাজাতে হবে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলীর ক্ষেত্রে সেসবের কিছুই করা হয়নি।

এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হাসেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দাফনের ১০-১৫ মিনিট আগে আমার অফিসের স্টাফ আমাকে মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলীর মৃত্যুর খবরটি জানায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম জানাজা কখন? সে আমাকে বলল রাত ৯টায়। আমি বললাম এত কম সময়ে তো এখন প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হবে না। সেজন্য আর প্রশাসনকে জানানো হয়নি। পরিবার যদি ২-৩ ঘণ্টা আগে জানাত তাহলে আমরা প্রশাসনকে অবহিত করতে পারতাম।

চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ত্রিনাথ সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলীর মৃত্যুর খবর কেউই আমাদের জানায়নি। জানালে কুমিল্লা থেকে সশস্ত্র সদস্য এনে গার্ড অব অনার দিতাম। রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে ইউএনও মহোদয়ের কাছ থেকে এ ঘটনা শুনে হতবাক হয়েছি। পুলিশ বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দিতে সব সময় প্রস্তুত।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানানো আমাদের জন্য গর্বের। মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলীর মৃত্যুর খবর তার পরিবার কিংবা মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন কেউই আমাদের জানায়নি। দাফনের পরদিন ঘটনাটি শুনে দ্রুত নিহত মুক্তিযোদ্ধা জুনাব আলীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিই। তার শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে আসি। এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদেরকে কেউই বিষয়টি জানায়নি।

আরিফ আজগর/এসএসএইচ