কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ঘুষের টাকাসহ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দু’জনকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল সাব রেজিস্ট্রার নাহিদুজ্জামানসহ দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করে দুদক।

মামলায় আসামিদের মধ্যে দুর্জয় ঘুষ লেনদেনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। কিন্তু এ ঘটনার আড়াই বছর পর মামলার এজাহারভুক্ত ৩ আসামিকেই নির্দোষ দাবি করে আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুদক। গত বৃহস্পতিবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। প্রতিবেদনটি রোববার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। শুনানি সাপেক্ষে আদেশের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন কক্সবাজার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের আইনজীবী আব্দুর রহিম। 

আসামিরা হলেন- চকরিয়া উপজেলার সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার (বর্তমানে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে কর্মরত) মো. নাহিদুজ্জামান, অফিস মোহরার দুর্জয় কান্তি পাল ও সাবেক অফিস সহকারী (বর্তমানে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মরত) শ্যামল বড়ুয়া। তাদের মধ্যে দুর্জয় মারা গেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১ এপ্রিল চকরিয়া সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের এক ভুক্তভোগী ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে করেন। পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ছদ্মবেশে দুদক কর্মকর্তারা চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এরপর সন্ধ্যা থেকে অভিযান চালিয়ে ঘুষের ৬ লাখ ৪২ হাজার ১০০ টাকাসহ সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদুজ্জামান ও মোহরার দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করে দুদক। এ সময় শ্যামল বড়ুয়ার ড্রয়ার থেকেও টাকা জব্দ করা হয়।

ঘটনার পরদিন দুদক কর্মকর্তা বাদী হয়ে নাহিদুজ্জামান, দুর্জয় ও শ্যামলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ৪ এপ্রিল দুই নম্বর আসামি দুর্জয়কে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় দুদক। রিমান্ড শেষে দুর্জয় ঘুষ লেনদেনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন শ্যামল। অন্য দু’জনও জামিনে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে দুর্জয় মারা যান।

মামলাটি চলাকালীন প্রথমে তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ। পরে তার বদলি হলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহকে। তদন্ত শেষে তিনি অভিযানের সময় দুদক দলের জব্দ করা টাকা ‘ঘুষ বা অবৈধভাবে অর্জিত নয়’ মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য কমিশনারের কাছে পাঠান।

গত ২০ সেপ্টেম্বর দুদকের কমিশনার (তদন্ত) তা অনুমোদন দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ অক্টোবর তিন আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা নাছরুল্লাহ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাইদুল ফরহাদ/এএএ