পূজা উদযাপন করতে নিজ কর্মস্থল গোপালগঞ্জ থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তপন কুমার মন্ডল। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলেন চিকিৎসক।

রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুকসুদপুর উপজেলার গেড়াখোলা পৌঁছালে ডা. তপন কুমার মন্ডলের ব্যক্তিগত গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়া হলে রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত তপন কুমার মন্ডল বাগেরহাটের চিতলমারি উপজেলার পরানপুর গ্রামের গৌর দাস মন্ডলের ছেলে।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকালে তপন কুমার মন্ডলের মরদেহ তার নিজ কর্মস্থল শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে আনা হয়। মরদেহ মেডিকেল কলেজে পৌঁছোনোর পর সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। 

পরে সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারি উপজেলার পরাণপুর গ্রামে। সেখানে তার মরদেহ সৎকার করা হয়।

নিহত ডা. তপন কুমার মন্ডলের স্ত্রী ডা. শর্মীষ্ঠা ঘোষাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বর্তমানে আমার সন্তানদের নিয়ে মিরপুরে থাকি। আমাদের সঙ্গে পূজার ছুটি কাটাতে দুপুরে গোপালগঞ্জ থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকায় আসছিল আমার স্বামী। পথে মুকসুদপুরে গেড়াখোলায় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। সেখান থেকে প্রথমে গোপালগঞ্জে পরে সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিয়ে ভর্তি করা হয়।পরে রাত ৯ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবার জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. জাকির  হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডা. তপন পূজোর ছুটি নিয়ে ঢাকায় পরিবারের কাছে যাচ্ছিলেন। রোববার দুপুরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে আমরা ছুটে যাই। প্রথমে গোপালগঞ্জ চিকিৎসা দেওয়া হয় পরে তাকে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, ডা. তপন কুমার মন্ডলের মৃত্যুতে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই শোকাহত। আজ সোমবার ভোরে তার মরদেহ গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে আনা হয়। এরপর কলেজের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শেষ বিদায় জানিয়ে তার মরদেহের পাঠিয়ে দেওয়া হয় তার গ্রামের বাড়িতে। তপন মন্ডল আদর্শ শিক্ষক ছিলেন এবং চিকিৎসা সেবায় তিনি তার সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। আমরা ভালো একজন শিক্ষক ও চিকিৎসককে হারালাম।

ফরিদপুরের ভাংগা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম বলেন, গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে এঘটনা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসকরত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আশিক জামান/আরকে