কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ করার বিষয়টিকে অনেক পরিবারই চাপ মনে করেন। তাই আমার মৃত্যুর পর আমি কাউকে চাপে রেখে যেতে চাই না। এজন্য বেঁচে থাকতেই আমি আমার আত্ম শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে ফেললাম।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার কাশবন গ্রামে কবির নিজ বাড়িতে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।

কবি নির্মলেন্দু গুণ তার আত্ম শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করতে সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতে আসেন। এখানে এসে গত রোববার (২২ অক্টোবর) দিনব্যাপী তিনি তার নিজ গ্রামসহ আশপাশের চারটি গ্রামের ধনী-গরিব সব শ্রেণির চারশ মানুষকে দাওয়াত করে বাড়িতে এনে আত্ম শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করেন। ওই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আসা ওইসব লোকজনের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন কবি।

শ্রাদ্ধ তো সাধারণত মৃত্যুর পরে করা হয় জানতে চাইলে কবি বলেন, জীবিত থাকতে শ্রাদ্ধ করার বিষয়টি নতুন নয়। এটা অনেক আগে থেকে অনেকেই করে আসছেন। আমাদের এলাকাতেও কেউ কেউ জীবিত থাকতেই শ্রাদ্ধ করেছেন। জীবিত থাকতে শ্রাদ্ধ করলে এটাকে বলা আত্ন শ্রাদ্ধ। আমিও আমার আত্ম শ্রাদ্ধ করলাম।

কোন কাজটি এখনও করা হয়নি বলে মনে করেন জানতে চাইলে কবি বলেন, আমার করার মতো আর কিছু বাকি আছে বলে মনে করি না। যা করার করেছি এবং যা পাওয়ার তাও পেয়েছি। আমার অবর্তমানে কিছু স্মৃতি চিহ্ন রেখে যাওয়ার চিন্তা করেছিলাম, তাও সাধ্যমতো করেছি। আমার নিজ গ্রাম কাশবনে রামসুন্দর পাঠাগার করেছি। কাশবন বিদ্যানিকেতন করেছি। নেত্রকোণা সদরে কবিতাকুঞ্জ করেছি। ময়মনসিংহ এবং ঢাকায়ও স্মৃতি চিহ্ন রেখে যাওয়ার মতো কিছু কাজ করেছি। মূলত আমি যে যে জায়গাগুলোতে থেকেছি- সবখানেই কিছু না কিছু স্মৃতি চিহ্ন রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

১৯৪৫ সালের জুন কবি নির্মলেন্দু গুণ নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মা বীণাপানি গুণ। মূলত তিনি কবি হলেও কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। ছবি এঁকেছেন। তার কবিতায় নারী প্রেম, শ্রেণি সংগ্রাম ও স্বৈরাচার বিরোধিতার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তার রচিত মুজিব-লেলিন-ইন্দরা, প্রেমাংশুর রক্ত চাই, না প্রেমিক না বিপ্লবীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রন্থ রয়েছে। তিনি বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

মো. জিয়াউর রহমান/এমএএস