সাধারণত ড্রাগন গাছে ফুল আসে এপ্রিল মাসে। সেই সময় দিন বড় তাই আলো বেশি থাকে। রোদের তাপমাত্রাও বেশি থাকে। কিন্তু আগাম চাষে ড্রাগন ফুল ও ফল পেতে এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছেন এক চাষি। ড্রাগন ফলের কাছে দিনকে ১৯ ঘণ্টা বানাতে জমিতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে কৃত্রিম দিন তৈরি করা হয়েছে। এভাবে ড্রাগন ফল গাছকে বোঝানো হচ্ছে দিন বড়ই আছে।  

রাজশাহীর পবা উপজেলার মোহনপুরে ২৬ কাঠা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন মো. বজলুর রহমান। ড্রাগন গাছে আগাম ফুল ও ফল পেতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে কৃত্রিম দিন করে রেখেছেন তিনি। তার দাবি এভাবে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রাখলে ড্রাগন গাছে আগাম ফুল আসে। তার জমিতে ইতোমধ্যে ড্রাগনের ফুল আসা শুরু করেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ২০২২-২৩ মৌসুমে ২১৩ দশমিক ৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ড্রাগনের চাষ হয়েছে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায়। এই উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে।

ড্রাগন চাষি বজলুর রহমানের ছেলে আতাউর রহমান বলেন, এখন প্রকৃতিতে শীত এসেছে। রাতে কুয়াশা পড়ছে। তাপমাত্রা কমেছে। সাধারণত ড্রাগন গাছে ফুল আসে এপ্রিল মাসে। সেই সময় দিন বড়, আলো বেশি থাকে। রোদের তাপমাত্রাও বেশি থাকে। তাই বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে গাছকে বোঝানো হচ্ছে দিন বড়ইছে। ফলে বাল্ব জ্বালিয়ে রাখলে আগাম ফুল আসার সম্ভাবনা থাকে। আগাম  ফুলের জন্য ড্রাগনের জমিতে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গাছে ড্রাগন ফুল ফোটতে বড় দিন হলে ভালো হয়। বড় দিন হলে ড্রাগন ফুল ফোটে ভালো। সূর্যের আলো বেশি সময় থাকলে ড্রাগন ফুলের জন্য ভালো। আমরা সেই চেষ্টা করছি। বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে অনেকেই সফল হয়েছেন। তুলনামূলক আগাম ফুল এসেছে গাছে। আমাদের জমিতে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা থাকায় আগেই ড্রাগন ফুলের দেখা মিলেছে। আশা করছি আগাম ড্রাগন পাওয়া যাবে। প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে বাল্ব জ্বালিয়ে রাত ১১টার দিকে বন্ধ করে দেই। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড্রাগনের জমিতে সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে বাল্ব জ্বালানো হচ্ছে। এই আলো গাছকে সজাগ রাখতে ও বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। গাছের জীবন আছে, তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সূর্যের আলো চলে যাওয়ার পরে গাছ সালোকসংশ্লেষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম থামিয়ে দিতে পারে। ফলে বিলম্বিত হতে পারে ফুল ফোটা। তাই আলো ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত সময়ে ড্রাগনের ফুল মেলার সম্ভাবনা আছে।

ড্রাগন চাষি হাবিব বলেন, ড্রাগনের জমিতে আলো জ্বালিয়ে দিনের সমাপ্তিটা আড়াল করা হয় গাছের থেকে। এতে করে গাছ নিজেকে গুটিয়ে না নেয় তার স্বাভাবিক কর্যক্রম থেকে। ফলে ঠিকভাবে গাছ চালিয়ে নেয় সালোকসংশ্লেষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম। এতে তাড়াতাড়ি ফুল আসবে বলে চাষিদের বিশ্বাস। গাছে আগাম ফুল আসলে ফলও আগাম পাওয়া যাবে। তখন দামও বেশি পাওয়া যাবে। সাধারণত ড্রাগন গাছে ফুল আসে এপ্রিল মাসে। জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এপ্রিলের সময়টা কমিয়ে মার্চেই আগাম ফুল আনার চেষ্টা করা হচ্ছে ড্রাগনের জমিতে আলো জ্বালিয়ে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ড্রাগন ফুল ফোটতে বড়দিন লাগে। ১২ ঘণ্টার বেশি দিন হলে ভালো হয়। তাই সূর্যের বিকল্প হিসেবে বাল্ব জ্বালিয়ে ড্রাগন গাছকে বোঝানো হচ্ছে দিন বড়। অর্থাৎ সূর্য আকাশে না থাকলেও বাল্ব জ্বালিয়ে সূর্যের উপস্থিতি জানান দেওয়া হচ্ছে। আলো পেলে ড্রাগন গাছ দিনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। ফলে আগাম ফুল আসে গাছে।

শাহিনুল আশিক/আরকে