রাজস্ব বকেয়া থাকায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ
রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার ১০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৮১ লাখ টাকা রাজস্ব বকেয়া থাকায় নিবন্ধন সার্ভারের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সেবা গ্রহীতারা। নিবন্ধন নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন তারা।
রসিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি করপোরেশন রংপুরে। জন্ম ও মৃত্যুর ৫ বছর পর্যন্ত নিবন্ধন ফি ২৫ টাকা, ৫ বছর পর থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ৫০ টাকা, জন্ম তারিখ সংশোধন ১০০ টাকায় এবং যেকোনো তথ্য সংশোধনে ৫০ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি টাকা নিলেও দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া সরকারি রাজস্ব। বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করায় গত ১৫ অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে নিবন্ধন সার্ভারটি।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক কোটি ১৩ লাখ টাকা রাজস্ব বকেয়ার কারণে সার্ভারটি বন্ধ করে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে ৩২ লাখ টাকা জমা দিলে ফেব্রুয়ারিতে আবার সাময়িকভাবে এটি চালু করা হয়। তবে আবারও দীর্ঘদিন রাজস্ব জমা না দেয়ায় প্রায় ৮১ লাখ টাকার রাজস্ব বাকি পড়েছে। এ কারণে ১০ দিন ধরে বন্ধ নিবন্ধন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন সূত্র বলছে, মূলত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি সিটি করপোরেশন পাবে নাকি সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে– এ নিয়ে তৈরি হয়েছে সমস্যা। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ফি পরিশোধে সম্প্রতি ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। ফলে এই ফি সরাসরি চলে যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। এ কারণেই প্রায়ই সার্ভার ডাউন ভোগান্তিতে ব্যহত হচ্ছে নিবন্ধন সেবা।
গতকাল সোমবার (২৩ অক্টোবর) রসিকের নিবন্ধন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জন্ম নিবন্ধন করার জন্য লোকজন আসছেন এবং ফিরে যাচ্ছেন। নিবন্ধন বিভাগ থেকে তাদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সার্ভার বন্ধ। নগরীর শালবন এলাকার বাসিন্দা আহমেদ জুবায়ের মাসখানেক ধরে মেয়ের জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য ঘুরছে। কিন্তু আজো তাকে সংশোধিত সনদ দেওয়া হয়নি। এ কারণে ক্ষুব্ধ এই চাকরিজীবী।
রসিক কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিবন্ধন শাখায় কথা হলে আহমেদ জুবায়ের বলেন, জন্ম নিবন্ধনের কাজ তো ফ্রিতে করে না। আগে টাকা পরে কাজ। কিন্তু দেড় মাস থেকে মেয়ের নিবন্ধনের সামান্য পরিবর্তনের জন্য ঘুরছি কাজ হচ্ছে না। যেদিনে আসি শুনি সার্ভার জ্যাম। আজ শুনছি সার্ভার নাকি বন্ধ। কবে খুলবে তাও জানি না। এর মাঝে বেশ কয়েকবার এসে ঘুরে গিয়েছি।
জন্ম নিবন্ধন তুলতে আসা নিউ আদর্শপাড়া এলাকার শাকিল মিয়া বলেন, দুই সপ্তাহে চারবার এসেছি, প্রতিদিন ঘুরতেছি। তবুও জন্ম নিবন্ধন সনদ হাতে পাইনি। সবাই শুধু বলছে সার্ভার নাকি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কোনদিন খুলবে তা বলে না। একটা নিবন্ধনের জন্য এতো কষ্ট কি সহ্য হয়? আমরা তো টাকার বিনিময়ে এই সেবা নিতে আসি, তারপরও কেন এতো হয়রানি।
নগরীর শাপলা চত্ত্বর এলাকার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, জন্ম নিবন্ধন এখন জন্মের কষ্ট। জন্ম নিবন্ধন তুলতে এলে খুব ঘুরতে হয়। কখনও বলে নেটওয়ার্ক নাই, কখনও বলে সার্ভার জ্যাম, এখন শুনছি সরকারকে টাকা না দেওয়ায় সার্ভার বন্ধ। আমরা তো টাকা দিয়ে নিবন্ধন তুলি, তাহলে আমাদের ঘুরতে হবে কেন?
রসিকের ওয়ার্ড পর্যায়ের অন্তত ৩ জন ডিজিটাল উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে এমনিতেই ধীরগতিতে নিবন্ধনের কাজ চলছে। তার ওপর ১০ দিন থেকে সার্ভার বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ থাকায় না বুঝে অনেকে গালমন্দ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন শাখার প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ আছে। তা চালুর চেষ্টা চলছে। সরকারি বরাদ্দ কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ব্যয় নির্বাহের জন্য খরচ হয়ে যায় রাজস্বের টাকা। কিছু টাকা বাকি আছে, সেটা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হচ্ছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য যে টাকা সেবাগ্রহীতারদের কাছ থেকে নেওয়া হয়ে থাকে তা বেতন-ভাতায় ব্যয় নির্বাহে যোগ করা হয়। এ ব্যাপারে সরকার যদি কিছু করে সেটা দেখা যাবে। দরকার হলে আমাদের বেতন-ভাতা বন্ধ রেখে তা পরিশোধ করা হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস