দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও খালের ওপর নির্মিত হয়নি সেতু। তাই প্রতিনিয়তই ভোগান্তি সহ্য করে ওই খালটি পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় ছয়টি গ্রামের অন্তত পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের। শুকনো মৌসুমে খালের ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে লোকজন কোনো রকম যাতায়াত করলেও বর্ষাকালে দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বর্ষায় খালে ডিঙি নৌকার মাধ্যমে জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে দিয়ে খাল পারাপার হতে হয় তাদের।

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ রাজী খালটি।

এ খাল পারাপার করতে হয় ইউনিয়নটির ১ ও ২নং ওয়ার্ডের ছয়টি গ্রামের অসুস্থ রোগী, গর্ভবতী নারী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষকে। খাল পারাপার করতে গিয়ে প্রায় সময়ই ঘটে ছোট বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এসব দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় বলে জানান স্থানীয়রা। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে খালটির ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানান এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজী খালটি হারুলিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মোজাফফরপুর ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডকে পৃথক করেছে। ফলে খালটির আশপাশের ছয়টি গ্রামের লোকজনের যাতায়াত করতে হয় এ খাল পার হয়েই। স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই খাল পার হয়েই তাদেরকে উপজেলা সদর, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাওয়া আসা করতে হয়।

বর্তমানে এ ডিঙি নৌকার মাধ্যমে খাল পারাপার হচ্ছেন স্থানীয় ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬টি মাদরাসা ও একটি কলেজের শিক্ষার্থীসহ ৬ গ্রামের মানুষ। তবে ডিঙি নৌকায় খাল পারাপার করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এছাড়া গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে ঝুঁকির মধ্য দিয়ে খাল পারাপার করতে হচ্ছে।

হারুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাজি লিটন বলেন, আমরা বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে গেছি। সবাই বলে ব্রিজ নির্মাণ করে দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা অবহেলিতই রয়ে গেলাম। আমাদের এলাকার মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে আমরা বড় ভোগান্তি পোহাচ্ছি। এ ছাড়া অসুস্থ রোগীদের নৌকায় করে হাসপাতালে নেওয়া অনেক কষ্ট। তাই এই খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা খুবই জরুরি।

স্থানীয় চৌকিদরা গ্রামের বাসিন্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমন মিয়া জানায়, প্রতিদিন খাল পার হয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করি। খালটি পার হওয়ার সময় ভয় লাগে। কয়েক দিন আগেও খাল পার হওয়ার সময় এক ছাত্র পড়ে গিয়েছিল। বৃষ্টির সময় খালে স্রোত থাকে। তখন আরও বেশি ভয় লাগে। ব্রিজ হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।

দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় চৌকিদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল আহমেদ বলেন, রাজী খাল এক সময় নদী ছিল। তবে এখন আগের অবস্থা নাই। তবে খাল দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষক, জেলেসহ শত শত মানুষ চলাচল করেন। এখানে একটা সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

এ নিয়ে কথা হলে স্থানীয় মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির আলম ভূঞা বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ডিও লেটার দিয়েছেন। আমিও এলজিইডি অফিসের সঙ্গে বার বার কথা বলেছি। আশা করি খুব দ্রুত এ খালে একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রাজী খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এমপির কাছে ডিও লেটারসহ আমরা একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রস্তাবটি পাস হলে অবশ্যই ব্রিজ নির্মাণ শুরু হবে।

জিয়াউর রহমান/আরকে