পৃথিবীর কোনো মানুষ নিজের সন্তানকে পুড়িয়ে মারতে পারে না। তা না পারলেও ঝালকাঠির মানুষ আজ জানল কীভাবে বাবুই পাখির বাসা পুড়িয়ে ইঞ্চি মাাপের অবুঝ শিশু পাখিকে কতটা নারকীয়ভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। মানুষের বিবেক ও মনুষ্যত্ব কি আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানাবে। একটি, দুটি নয় ৩৩টি বাবুই ছানা পুড়িয়ে অঙ্গার করে ফেললেন ঝালকাঠি শহর সংলগ্ন নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জালাল সিকদার। 

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রাণী বৈচিত্র্যের ওপর হুমকি হয় এমন কোনো কাজ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমাদের প্রত্যেক নাগরিক ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা। 

খেতের ধান খাওয়ায় উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জালাল সিকদারের ক্ষেতের ধান খাওয়ায় তিনি ওই এলাকার সিদ্দিক মার্কেটের সামনের তাল গাছে থাকা বাবুই পাখির বাসায় বাঁশ দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারেন ৩৩টি বাবুই ছানা। এ ঘটনায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। 

স্থানীয় এক যুবক ঘটনার ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জালাল সিকদারের রোপন করা বোরো ধান প্রায় পেকে এসেছে। সেই ধান খায় বাবুই পাখি। একই গ্রামের মরহুম আফসার মল্লিকের জমির একটি তালগাছে বাবুই পাখির প্রায় শতাধিক বাসা ছিল। জালাল সিকদারের ধারণা এ তালগাছের বাসা বাধা বাবুই পাখিরা তার ধান খেয়ে নষ্ট করছে। তাই শুক্রবার দুপুরে তিনি বাঁশের মাথায় মশাল বানিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন তালগাছের বাবুই পাখির বাসায়। আগুনের তাপে বড় বাবুই উড়ে যেতে পারলেও মারা যায় ৩৩টি বাচ্চা । 

স্থানীয় বাসিন্দা জুলহাস মল্লিক বলেন, নিষ্ঠুর এ ঘৃণ্য কাজ মানুষ করতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগে। বাবুই পাখির অপরাধ হচ্ছে ‘খেতের ধান খাওয়া!'

এলাকার পাখিপ্রেমি অভিজিৎ চন্দ্র বলেন, শনিবার ঝালকাঠি বনবিভাগে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পাখি সংরক্ষণ বিষয়ে আমাদের একটি সংগঠন আছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামীকাল এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার চিন্তা করছি।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার পাখিপ্রেমি ও প্রাণি সংগঠক শফিউল আজম প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঘটনাটি মেনে নিতে পারছি না। অনু নামের আরেক পরিবেশকর্মীও নিন্দা জানিয়েছেন। 

এছাড়া 'ঝালকাঠি রেসিং প্রিজন এসোসিয়েশন' ও 'ঝালকাঠি রেসিং প্রিজন এক্সিবিশন' নামে দুটি সংগঠন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। 

সুজন'র জেলা সভাপতি ও পরিবেশকর্মী ইলিয়াস সিকদার ফরহাদ বলেন, আমার মতে বাবুই পাখির বাসা পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের একটি হওয়া উচিত। সেখানে বাসা ধ্বংস ও পাখির ছানা পুড়িয়ে হত্যা যে বা যারা করেছে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই। এদেরকে জনসম্মুখে শাস্তি দেওয়া উচিত।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি হেমায়ত উদ্দিন হিমু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি নিন্দনীয় একটি ঘটনা। আইন না জানার কারণে হয়তো করেছে। তবুও শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন না করতে পারলে এ অন্যায় বন্ধ হবে না। তাই আইনিভাবে এর বিচার দাবি করি পাশাপাশি মানুষকে মানবিক হওয়ার আবেদন জানাই।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৌখিক অভাযোগ পেয়েছি। এ ঘটনা যদিও খুলনা বন ও বণ্যপ্রাণী বিভাগের আওতায়। আমাদের ঝালকাঠি অফিস হচ্ছে সামাজিক বন বিভাগের। তিনি স্থানটি পরিদর্শনে যাবেন বললেও পরবর্তীতে গিয়েছিলেন কিনা সেই বিষয় জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল কল রিসিভ করেননি। 

বাবুই পাখির নীড়ে আগুন লাগানো জালাল সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ক্ষেতের ধান প্রতিদিন পাখি খেয়ে ফেলায় আমি আর্থিক লোকসানের দিকে যাচ্ছিলাম। মাথা গরম থাকায় বাসা নষ্ট করেছি। আমি এজন্য অনুতপ্ত।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবুই পাখির বাচ্চা বাসাসহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা আমি শুনলাম। যে করেছে এ ধরনের লোককে আমরা ঘৃণা করব। বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে বিষয়টি দেখতে বলব। কেউ অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনাটি অবশ্যই অমানবিক।

ইসমাঈল হোসাঈন/এমএএস