মা-বাবার সঙ্গে আব্দুর রহিম

মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত যশোরের মণিরামপুর উপজেলার আব্দুর রহিমের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তার সংগঠন টিম পজিটিভ বাংলাদেশের (টিপিবি) পক্ষ থেকে আব্দুর রহিমের ভর্তির খরচ বহন এবং যাবতীয় বই কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৭২৪ হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আব্দুর রহিম। তিনি ঢাকা কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৭৬.৫ নম্বর। শিক্ষাজীবন জুড়েই অভাব অনটনে আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল রহিমের নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেও সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরে ছিল।

আব্দুর রহিম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামের রিকশাচালক আব্দুল হালিম বিশ্বাস ও গৃহিণী জেসমিন খাতুন দম্পতির ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে আব্দুর রহিম বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রহিমের বাবা। রহিমের বাবার নিজ বাড়ির দুই কাঠা জায়গা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। বাড়িতে ছোট টিনের একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। 

নুন আনতে পান্তা ফুরানো আব্দুল হালিমের পক্ষে ছেলেকে মেডিকেলে পড়ানোর খরচ জোগানো অসম্ভব। বিষয়টি জানতে পেরে রহিমের মেডিকেলে ভর্তি ও লেখাপড়ার সমস্ত ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তার সংগঠন টিম পজিটিভ বাংলাদেশের (টিপিবি) পক্ষ থেকে রহিমের ভর্তির খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, টিম পজিটিভ বাংলাদেশের (টিপিবি) পক্ষ থেকে অদম্য মেধাবী ছাত্র ছোট ভাই রহিমের ভর্তির খরচ বহন করা হবে ইনশাআল্লাহ। এই ভাইকে অথবা ওর পক্ষ থেকে কাউকে যোগাযোগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের অনেক মেধাবী ও মানবিক ডাক্তার প্রয়োজন। ইতোমধ্যে টিম পজিটিভ বাংলাদেশের সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। 

আব্দুর রহিমের বাবা আব্দুল হালিম বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকে অদম্য মেধাবী আব্দুর রহিম। ২০১৮ সালে মণিরামপুরের নেংগুড়াহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ঢাকার পিলখানা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদ পাবলিক কলেজে তাকে ভর্তি করি। বিজ্ঞান বিভাগে ১৫০ জনের মধ্যে প্রথম হওয়ায় বিনা খরচে সেখানে পড়ার সুযোগ পায় সে। ২০২০ সালে এইচএসসিতে জিপিএ -৫ পায় সে। এইচএসসির ফলাফল পাওয়ার আগে  মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের জন্য গড়ে ওঠা মেডিকো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। পরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ফলাফলে মেধা তালিকায় ৭২৪তম হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। 

তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর স্বপ্ন দেখতাম আল্লাহ আমাকে একটা ছেলে দিলে তাকে ডাক্তার বানাবো। আল্লাহ ছেলে দিলেন। সে মেডিকেলে চান্সও পেয়েছে। এখন ছেলের ভর্তি, বই কেনা অনেক খরচ। পাব এতো টাকা কোথায় পাব তাই নিয়ে চিন্তা আছি। তবে শনিবার দুপুরে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী খোঁজ খবর নিয়েছেন। তার সংগঠন টিম পজিটিভ বাংলাদেশের (টিপিবি) পক্ষ থেকে রহিমের ভর্তির খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। 

আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় লেখাপড়ার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেক অসুবিধার মধ্যে থাকলেও আমি চেয়েছিলাম ভালো রেজাল্ট করে সমাজের অসহায় বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে। তিনি তার স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সহায়তার কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

আব্দুর রহিম বলেন, আমি ডাক্তার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। সাধ্যমত মানুষের সেবা করতে চাই। আব্বু গরিব মানুষ। কষ্টতো করতে হবে।

টিম পজিটিভ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য সামিয়া হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নির্দেশে রহিমের খোঁজখবর নিয়েছি। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। টিম পজিটিভ বাংলাদেশ তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। মেডিকেলে ভর্তি থেকে শুরু করে বই কিনে দেওয়াসহ তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে টিম পজিটিভ বাংলাদেশ। আমাদের অনেক মেধাবী ও মানবিক ডাক্তার প্রয়োজন। সেই পথেই রহিম চলবে বলে আশা করি। 

জাহিদ হাসান/আরএআর