যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বেল্লাল হিসেবে পরিচিত। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে উল্লাপাড়ায় এসেছিলেন তিনি। দুই-তিন দিন ছিলেন উপজেলা ডাক বাংলোর একটি কক্ষে। সেখান থেকে তিনি কোথাও যাতায়াতে ব্যবহার করতেন উল্লাপাড়ার সাবেক এমপি আকবর আলীর গাড়ি। 

ঢাকা পোস্টকে এমনটাই জানিয়েছেন উল্লাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর ও সলঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদুল ইসলাম আরেফী ওরফে বেল্লাল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের মানিক দিয়ার গ্রামের মৃত রওশন মণ্ডলের ছেলে। তার বাবা পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার ছিলেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তারা ছয় ভাই এবং চার বোন সবাই আমেরিকায় থাকেন। প্রায় ৪০ বছর আগে তার বাবা আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন।

হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের বাড়ি আমার ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডে হলেও তারা এখানে কেও থাকেন না। আমি নিজেও তাকে বা তাদের চিনি না। 

আরেফীকে চেনেন না বলে জানান হাটিকুমরুল ইউপির তিন নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সেলিম রেজাও। 

সলঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আরেফীর বাবা মৃত রওশন মণ্ডল পাবনা জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন। তারা ভাইবোনরা ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তারা খুব একটা এলাকায় আসেন না। এলাকার লোকজনের সাথে তাদের তেমন যোগাযোগও নেই। শুনেছি সাবেক এমপি আকবর আলীর সাথে আরেফীর বাবার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। আরও শুনেছি, এম আকবর আলী আমেরিকায় গেলে আরেফীর বাসাতেই থাকতেন। এছাড়া, আরেফী যখন উল্লাপাড়া এসে ডাক বাংলোতে ছিলেন, তখন তিনি সাবেক এমপি এম আকবর আলীর গাড়িতে চলাচল করতেন।

ওসি বলেন, তিনি ছাত্রাবস্থাতেই পরিবারের সাথে আমেরিকায় যান। সেখানে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত বলে জেনেছি। তবে তিনি এলাকায় এলে নিজেকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। মানিক দিয়ার গ্রাম বা উল্লাপাড়ায় তার কোনো বাড়ি নেই। তার দাদা-দাদির জন্য দোয়া মাহফিল করতে গত জুলাই মাসে এসেছিলেন। তখন তিনি উল্লাপাড়া ডাক বাংলোয় ছিলেন।

ওসি আরও বলেন, যেহেতু উল্লাপাড়ার সাবেক এমপি এম আকবর আলীর সাথে তার বাবা মৃত রওশন মণ্ডলের সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্র ধরে তার সাথেও আকবর আলীর সম্পর্ক আছে বলে জানা গেছে। তার স্থানীয় আত্মীয় স্বজনরা কেও সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। তবে শোনা যায় তারা বিএনপির সমর্থক।

উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আরেফী গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে উল্লাপাড়াতে এসেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন— আমি আমেরিকার সিটিজেন, অনেকদিন পরে দেশে এসেছি।

সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, আরেফী এলাকার কিছু লোকজনকে খাওয়াবেন বলে জানিয়েছিলেন। যেহেতু তার এলাকাতে কোনো বাড়ি নেই, তাই তিনি ডাক বাংলোর একটি রুম নিয়েছিলেন। তবে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এমন পরিচয় দিলেও তখন বিষয়টি ওভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এলাকায় বাড়িঘর না থাকায় তাকে উপজেলা ডাক বাংলোতে একটা ঘর দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আমি শুনেছি সাবেক এমপি আকবর আলীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতা আছে। আরেফী তার গাড়িতে করে ঘোরাফেরা করেছেন। 

এ ব্যাপারে জানতে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম আকবর আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। 

শুভ কুমার ঘোষ/কেএ