রংপুরের পীরগাছায় চাঞ্ছল্যকর ব্যবসায়ী ফেরেস মিয়া হত্যা মামলায় ৪ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ শহিদুল ইসলাম এ রায় প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিল। পরে পুলিশি পাহারায় তাদেরকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার কান্দি কাবিলপাড়া গ্রামের আমিন মিয়ার ছেলে ফেরেস মিয়া গরু-ছাগলের ব্যবসা করতো। ২০১৯ সালের ৭ ফ্রেরুয়ারি দুপুরে ফেরেস মিয়া স্থানীয় চৌধুরানী হাটে ছাগল বিক্রি করে বাসায় ফেরেন। এরপর সন্ধ্যায় আবার বাইরে বের হন। সে কান্দি বাজারে জনৈক কাশিনাথের চায়ের দোকানে নাস্তা আর চা পান করে। এরপর সে আর বাসায় ফিরে আসেনি। দু'দিন ধরে স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পায় নাই।

এ ঘটনায় ৯ ফেরুয়ারি পীরগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার বাবা আমিন মিয়া। এর দুদিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি স্বজনরা জানতে পারে কাবিলপাড়া গুচ্ছ গ্রামে বালুর স্তুপের মধ্যে একটি মৃতদেহ পড়ে আছে। স্বজনরা সেখানে গিয়ে ফেরেস মিয়ার মরদেহ শনাক্ত করে। খবর পেয়ে পীরগাছা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত ফেরেস মিয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনায় নিহত ফরেস মিয়ার বাবা আমিন মিয়া বাদী হয়ে পীরগাছা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে একই গ্রামের শাহিন মিয়া ও জাহিদুল ইসলামকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা দুজনই ফেরেস মিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তারা আরও দুই সঙ্গী সাজেদুল ও কাল্টু মিয়ার নাম জানায়। পুলিশ শাহিন মিয়া ও জাহিদুল ইসলামকে আদালতে হাজির করলে তারা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

মামলাটি তদন্ত শেষে পীরগাছা থানা পুলিশের ওসি তদন্ত আজিম উদ্দিন, আসামি শাহিন মিয়া, জাহিদুল ইসলাম, সাজেদুল ইসলাম ও কাল্টু মিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আসামি ৪ জনকে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার করে জরিমানা এবং লাশ গুম করার অপরাধে ২০১ ধারায় আরো ৫ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন। বিচারক উভয়দণ্ডই এক সঙ্গে কার্যকর হবে এবং তারা যতদিন ধরে কারাগারে আটক আছে সেই সময়টা সাজা থেকে বাদ যাবে বলে রায়ে উল্লেখ করে।

সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক জানান, এ রায়ে বাদীপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করছে। তারা ন্যায় বিচার পাওয়ায় খুশি। এদিকে রায় ঘোষণার সময় আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস