মুন্সিগঞ্জে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশের এক বছর আজ। গত বছরের ১১ এপ্রিল প্রথম মুন্সিগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গত এক বছরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০ জনের এবং মারা গেছেন ৭০ জন।

মুন্সিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় গড়ে ২০ জনের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ১২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০ জনের এবং মারা গেছেন ৭০ জন।

গত বছরের ৩ এপ্রিল থেকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ল্যাবে নমুনা পাঠানো শুরু হয়। এরপর ওই বছর ১১ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়।

জেলা থেকে প্রথমে আইইডিসিআর ল্যাবে নমুনা পাঠানো হলেও বর্তমানে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) ল্যাবে এই জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে করোনা শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে ৫৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে, সেখানে ৭৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সে হিসেবে এপ্রিল মাসে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

মে মাসে জেলায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ওই মাসে ৩ হাজার ৩৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৬৩০ জনের দেহে। মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়ায় যা এপ্রিল মাসের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসকে জেলায় নমুনা পরীক্ষা ও পজিটিভের সংখ্যার দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে জুন মাস। জুন মাসে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৬ হাজার ৮ জনের, সেখানে করোনা শনাক্ত হয় ১ হাজার ৩৯৭ জনের। জুন মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশ নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। 

তবে জুলাই মাসে করোনা পরীক্ষা ও সংক্রমণের সংখ্যা অনেকটাই কমে আসে। জুলাই মাসে ২ হাজার ৭০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে শনাক্ত হয় ৬৪৩ জন। সে হিসেবে জুলাই মাসে করোনা পজিটিভের হার ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এ ছাড়া গত আগস্ট মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৬৮ জনের এবং নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৯৭৯ জনের। সে হিসেবে গত মাসে করোনা পজিটিভের হার ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগস্ট মাসে করোনা পরীক্ষা করা হয় ১ হাজার ৯৭৯ জনের। এতে ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ হারে করোনা পজিটিভ হন ৪৬৮ জন।

সেপ্টেম্বর মাসে করোনা পরীক্ষা করা হয় ১ হাজার ৯০৯ জনের। ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ হারে করোনা পজিটিভ হয় ২৭৮ জন। অক্টোবর মাসে করোনা পরীক্ষা করা হয় ১ হাজার ১৫৫ জনের। ১৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ হারে করোনা পজিটিভ হয় ২২৬ জন। নভেম্বর মাসে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭১ জনের। ২৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ হারে করোনা পজিটিভ হন ৩২২ জন।

ডিসেম্বর মাসে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৫২৩ জনের। ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ হারে করোনা পজিটিভ হন ৩২৫ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রায় স্বাভাবিক হতে থাকে জেলা। ওই মাসে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৬৯ জনের। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯ জন। যা পরীক্ষা করা নমুনার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

এদিকে গত এক বছরে সবচেয়ে কম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। সে মাসে মাত্র ২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ৭০৫ জনের। যা পরীক্ষা করা নমুনার ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ পজিটিভ। তবে গত মার্চ থেকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে। 

ওই মাসে ১ হাজার ১৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ২৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে করোনা পজিটিভ হয় ২৭৬ জন। তবে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে চলতি মাসের প্রথম ১০ দিন। এই ১০ দিনে ১ হাজার ৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ২৮০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। যা প্রতি ১০০ জনে প্রায় ২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি মাসে করোনা সংক্রমণের সকল রের্কড ভেঙে দিয়েছে। প্রতিদিন করোনাভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। এতে ভ্যাকসিন দিয়েও সংক্রমণ রোধ করা যাচ্ছে না। ব্যক্তি সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব নয়।

জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ব.ম শামীম/এসপি