ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে বিলে। কারও হাতে পলো, কারও হাতে জাল। তারা হৈ-হুল্লোড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ ধরতে। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর গ্রামের ‘বোখা’ বিলে দেখা মিলে মাছ ধরার এমন উৎসবের। যাকে বলা হয় হাইত উৎসব। যেখানে বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও শামিল হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের বৈলর গ্রামের বোখা বিলটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন মাইল এবং প্রসস্থ প্রায় এক মাইল। তিনটি গ্রাম ঘিরে এই বিল। হাইত উৎসবটি গ্রাম-বাংলার অনেক পুরোনো ঐতিহ্য। কয়েক দশক আগেও এই বিলে নিয়মিত হাইত উৎসব হতো এবং নানা প্রজাতির বড় মাছ পাওয়া যেত। 

বোখা বিলে শেষবার হাইত উৎসব হয়েছিল অন্তত দুই যুগ আগে। বিলে পানি ও মাছ না থাকায় এ উৎসবে ভাটা পড়ে। এবারের বর্ষায় ভারী বর্ষণে বিলের চারদিকের বিভিন্ন মাছের ঘের ডুবে গিয়ে প্রচুর মাছ এসেছে বিলে। সেইসব মাছ ধরতে এ হাইত উৎসবের আয়োজন করে এলাকার মানুষ। 

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে মাইকিং করা হয় আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। আর এটি জানতে পেরে রাত থেকেই মানুষজন আসতে শুরু করেন এ বিলে। ফজরের পরপরই মাছ ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষজন। যা চলে দুপুর পর্যন্ত। মাছ ধরা দেখতেও বিলে আসেন বিভিন্ন বয়সী হাজারো মানুষ। অনেকে করেন স্মৃতি রোমন্থন। 

জবান আলী নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, ‘বয়সকালে আমরা এই বিলে বহুত মাছ মারছি। আগে তো বোয়ালসহ বড় বড় মাছ পাওয়া যাইতো। বহুদিন এই রহম কইরা মাছ মারা অয় না। মাইকিং করছে এইবার বিলে মাছ মারা অইবো। অহন তো আমার শরীরে শক্তি নাই যে মাছ মারাম, তবে মনডা টানতাছে দেহার লেইগ্যা। তাই দেখবার আইয়া পরলাম।’

ইসমাইল মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, মাছ পাওয়া কিংবা না পাওয়া এইটা কোনো ব্যাপার না। এটা একটা উৎসব। অনেক বছর পর মাছ ধরার নামে সবাই মিলে আনন্দ করতেই এসেছে সবাই। 

মাছ ধরতে আসা মনসুর আলী নামে বলেন, আমরা টাঙ্গাইল থেকে এসেছি। আমরা মৎস্য শিকারি সমিতির সদস্য। দেশের যে প্রান্তেই এভাবে মাছ ধরার খবর পাই আমরা সেখানে ছুটে যাই। তিনটি ট্রাকে করে ১২০ জন সদস্য আজ এখানে এসেছি। 

উবায়দুল হক/আরএআর