স্বামী-সন্তানের সঙ্গে আসমা বেগম

‘ভাতই জোটে না, আবার শখ; জীবনে কোনো শখ নেই, ইচ্ছাও নেই আমার; শুধু তিন বেলা ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। আপনারা আমার ভাতের ব্যবস্থা করে দেন।’

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার আসমা বেগম (৪৫)। উপজেলার মঠেরপাড় বটতলার সিঅ্যান্ডবি রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন তিনি। স্বামী ও একমাত্র ছেলে নিয়ে আসমা বেগমের পরিবার। এক সময়ের রুটির দোকানদার স্বামী আজাহার আলী বয়সের ভারে এখন আর কাজ করতে পারেন না।

আসমা বেগম মানুষের বাড়ি কাজ করে যা পান তা দিয়েই চলে ছেলের লেখাপড়া, স্বামীর ভরণপোষণ, ওষুধসহ সংসারের সবকিছু। তবে গ্রামে ঝিয়ের কাজ করে যা পান তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে রয়েছেন আসমা বেগম। একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। 

আসমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অনেক বছর ধরে আমরা সরকারি জায়গায় থাকি। কোনোদিন এক বেলা, কোনোদিন দুই বেলা ভাত জোটে কপালে। আর যেদিন কাজে যাইতে পারি না সেদিন না খেয়ে কিংবা মুড়ি আর পানি খেয়ে দিন পার করি। স্বামী কাজ করতে পারেন না দীর্ঘ পাঁচ বছর। অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। কোনোরকমে হেঁটে মসজিদ পর্যন্ত যান। এই সরকারি জায়গাতেই আমার ছেলের জন্ম। শেষ কবে তাকে ঈদে নতুন জামা কিনে দিয়েছি তা মনে পড়ে না। ছেলেটি মাঝে মাঝে বায়না ধরে, ছোট মানুষ তো। কিন্তু পেটে ভাতই পড়ে না ঠিকমত, নতুন কাপড় কীভাবে দেবো। এখন তিন বেলা যেন এক মুঠো করে ভাত খেতে পারি সেই দোয়া করি আল্লাহর কাছে।

সরকারি জমিতে আসমাদের ঝুপড়ি ঘর

ছেলের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত আসমা বেগম বলেন, এতদিন রাস্তার পাশে থাকি, কেউ কখনো তেমন সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। আর কতদিন সরকারি জায়গায় থাকতে পারব জানি না। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযানে এসে প্রশাসনের লোকজন সব ভেঙে দিয়ে যায়। পরে আবার কোনোরকমে ছাউনি দিয়ে ঘর তৈরি করি। 

তিনি বলেন, আমাদের তো আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। শুনেছি সরকার অনেককে জমিসহ ঘর দিচ্ছে। যদি একটি ঘর পেতাম তবে একটু শান্তিতে মরতে পারতাম। 

আসমা বেগমের স্বামী আজহার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এই রাস্তার পাশে থাকি। আগে একটি ছোট রুটির দোকান ছিল। কিন্তু লোকজন বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়ায় নতুন করে দোকান দেওয়ার স্বল্প পুঁজিটুকুও আমার নেই। এখন এতটাই দুর্বল হয়ে গেছি যে চলাফেরাই করতে পারি না ঠিকমতো। বয়স্ক ভাতার যে কয়টা টাকা পাই, ওষুধ কিনতে তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে বাইরে পানি পড়ার আগে আমাদের গায়ে পড়ে ৷ আল্লাহ যদি রহমত না করেন তবে অনাহারেই মরে যেতে হবে আমাদের।

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ সিদ্দিকী সিয়াম ও সাইফুল ইসলাম জানান, এই পরিবারটি বহুদিন ধরে সরকারি জায়গায় বসবাস করছে। আসমা বেগম মানুষের বাড়ি কাজ করে যা রোজগার করেন তা দিয়েই কোনো মতো চলেন। অসুস্থতার কারণে প্রতিদিন তিনি কাজ করতে পারেন না। তার স্বামীও কিছু করতে পারেন না। বেশি অসুস্থ হলে কখনো কখনো স্থানীয়রা কেউ ওষুধ কিনে দেন। আর না হলে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকেন।

প্রতিবেশী ফিরোজা আক্তার জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে আসমার পরিবার এই সরকারি জায়গায় থাকে। আসমা মানুষের বাড়ি কাজ করে খান। কত লোকই তো সাহায্য-সহযোগিতা পায়। ওরা হতদরিদ্র হলেও কিছুই পায় না।

উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসমা বেগম স্বামী-ছেলে নিয়ে সরকারি জায়গায় থাকেন। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করি। আসমা বেগমের স্বামী আজাহার আলীকে বয়স্কভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। সামনে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কোনো প্রকল্পের কাজ আসলে সেখানে আসমা বেগমের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি।

আরএআর/জেএস