রাবেয়া আক্তারের মেডিকেলে ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রাবেয়া আক্তারের মেডিকেলে ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। ফলে রাবেয়ার মেডিকেলে ভর্তির দুশ্চিন্তা কেটে গেল। রাবেয়া উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের হাজী ইমান আলী মোল্লাকান্দির কৃষক দাদন মোল্লার মেয়ে।

মুগদা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন রাবেয়া। ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭১ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ফল ঘোষণার পর রাবেয়ার স্বজনরা খুশি হলেও দুশ্চিন্তায় পড়েন বাবা-মা। অবশেষে রাবেয়ার ভর্তি সহযোগিতায় এগিয়ে এলেন উপমন্ত্রী শামীম।

কৃষক দাদন মোল্লার পাঁচ মেয়ের মধ্যে রাবেয়া তৃতীয়। ৭০ নম্বর মোল্লা বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন রাবেয়া। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. হুমায়ূন কবির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও হাজী শরীয়তুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান রাবেয়া।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতেন রাবেয়া। প্রাইভেট পড়িয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় খুলনা মেডিকেলে কলেজে ২৪৬৩তম হয়ে ভর্তি হওয়ায় সুযোগ পান।

বাবা-মা ও বোনদের সঙ্গে রাবেয়া

রাবেয়া আক্তার বলেন, প্রাইমারিতে যখন পড়তাম তখন বিদ্যালয়ের পাশে বাবার ছোট দোকান ছিল। ক্লাস শেষে বাবার সঙ্গে সময় দিতাম। আমরা পাঁচ বোন। বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছোট একটি ঘরে মা-বাবা ও পাঁচ বোন থাকি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব। বড় বোন যে জামা পরতেন, একই জামা আমরা ছোট বোনরা পরতাম। কারণ সবাইকে জামা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না বাবার। তাই এক জামা ভাগ করে পরতাম সবাই।

 রাবেয়া আরও বলেন, রোববার বিকেলে জানতে পারলাম আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। সোমবার তার বাসায় যেতে বলেছেন।

রাবেয়া আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি; আমার বাবা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। এক পা টেনে টেনে হাঁটেন। তাকে ঠিকমতো হাঁটতে দেখিনি। ছোটবেলায় চিকিৎসা করালে তার পা ঠিক হয়ে যেত। আমি ডাক্তার হয়ে ওসব মানুষের চিকিৎসা করব; যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন।

রাবেয়ার বাবা মোহাম্মদ দাদন মোল্লা বলেন, জীবনে কষ্ট করে পাঁচ মেয়েকে বড় করেছি। মানুষের সহায়তায় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। রাবেয়া টিউশনির টাকায় পড়াশোনা করেছে। আমি বাবা হয়ে শুধু উৎসাহ দিয়েছি। টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারিনি। এখন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে মেয়ে। এখনো তাকে সহায়তা করতে পারছি না। কি করব বুঝতে পারছি না। বাবা হিসেবে আমি দুর্ভাগা।

মা-বাবার সঙ্গে রাবেয়া

৭০ নম্বর মোল্লা বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনসুরুল হক রিচার্জ বলেন, রাবেয়ার মা মাঝেমধ্যে আমাদের কাছে এসে কান্না করতেন, বলতেন কীভাবে মেয়ের পড়াশোনা চলবে। আমরা সবসময় বলতাম, তার পড়াশোনার সব ব্যবস্থা করে দেবেন আল্লাহ। আপনার চিন্তা করতে হবে না। এখানে পড়ার সময় আমরা তাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আল নাসিফ বলেন, খবর পাওয়ার পর আমি উপমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাই। উপমন্ত্রী তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম আশ্রাফুন্নেছা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাবেয়ার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন।

শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ইউএনওর কাছ থেকে জানতে পেরেছি কৃষক দাদন মোল্লার মেয়ে রাবেয়া মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছে। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিই। তারই ধারাবাহিকতায় রাবেয়ার ভর্তিসহ যাবতীয় খরচ আমি দেব।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম