জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হিলি-শালাইপুর সড়কের কলন্দপুর এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুর একটি গার্ডার ধসে পড়েছে। নিম্নমানের কাজের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারকে দুষছেন তারা। 

স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের গত ৮ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু কলন্দপুর সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেন। দুই পাশে পিলার নির্মাণের পর সেতু সংযোগের ঢালাই কাজ চলছে। সেতুটির একপাশে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আরেক পাশের কাজ কম-বেশি হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর ঢালাই কাজ শেষ করা অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ভালো কাজ করলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। কাজ তদারকি করতে সড়ক বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। ভেঙে পড়া অংশ যেন কেউ না দেখতে পারে সেজন্য ওই স্থান থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের জয়পুরহাট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হিলি-শালাইপুর-কালাই সড়কের ১০ কিলোমিটারে পাঁচবিবি উপজেলার কলন্দপুর সেতুর অবস্থান। একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ জেলার পাঁচটি সেতু নির্মাণের কাজ পায়। ওই টাকার মধ্যে কলন্দপুর সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। কয়েক মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। ৪২ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর একপাশে ঢালাইয়ের কাজ প্রায় এক মাস আগে শেষ হয়েছে। 

ভ্যানচালক আবু তাহের বলেন, সরকার দেবে জনগণ চলাচল করবে। এই যে কাজটা দুই নম্বর করেছে এতে কি তারা টাকা মেরে খাওয়া ধান্দা করেনি? অর্ধেক টাকার কাজ করবে আর অর্ধেক পকেটে ভরবে। ইঞ্জিনিয়াররা প্রথমের দিকে দেখলে এমন হতো না। তাদের সব দোষ।

ব্যাটারিচালতি অটোরিকশা চালক মামুনুর রশিদ বলেন, এই কাজ খুব ভালো হয়নি। খারাপ কাজ করেছে। এখন ভেঙে পড়ে তাও ভালো হয়েছে, কেননা মানুষ চলাচলের সময় ভেঙে পড়লে অনেক সমস্যা হতো। 

ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গোলজার আলী বলেন, চিকন চিকন রড দিয়ে সেতু তৈরি করেছে। হয়তো মালামাল যেসব দেওয়ার কথা সেগুলো দেওয়া হয়নি। এ কারণে ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া মজবুত ও শক্ত হলে ভেঙে পড়ার কথা নয়। আমাদের চাওয়া সেতুটির কাজ ভালোভাবে করা হোক

এদিকে মেসার্স এমএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমডি ও সাইড ইনচার্জ বলছেন দুই রকমের কথা। সাইড ইনচার্জ হাসান পাটোয়ারী বলেন, পাঁচটি গার্ডারের মধ্যে একটির কাজ করা হয়েছে। সেটি মেশিন দিয়ে সরিয়ে সঠিক স্থানে বসানোর সময় স্লিপ করে একপাশ পড়ে ভেঙে যায়। 

তবে ওই প্রতিষ্ঠানটির এমডি নজরুল ইসলাম কাজল বলেন, ঢালাইয়ের সময় মাঝখানে পাম্প নষ্ট হয়ে গেছিল। এ কারণে সেখানে ফাঁকা রয়ে গেছিল। আমরা পুরোটা সরিয়ে ফেলেছি। তবে নিম্নমানের কাজ করা হয়নি।

এদিকে কাজটি সঠিকভাবে করা হয়নি বলে সেটি ঠিকাদারকে সরাতে বলা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ জয়পুরহাট কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহিনুর রহমান। 

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই কাজ করার ১৪ দিন পর আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি সেটি সঠিক করা হয়নি। তাই সেটি সরিয়ে ফেলার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর ওই কাজটি করতে গিয়েই তা ভেঙে পড়ে যায়। এতে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। ওই টাকা সরকার দেবে না। সেটি সম্পূর্ণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই দিতে হবে।

চম্পক কুমার/আরএআর