অবরোধে ট্রাক পোড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা বহিষ্কার
বিএনপির ডাকা অবরোধ চলাকালে ফেনীর লালপোলে ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি নুর উদ্দিন টিপুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই মামলায় ফেনী পৌর যুবদল নেতা মো. রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকতা মামলায় যুবদল নেতার সঙ্গে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় ফেনীর রাজনৈতিক মহলে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফেনী মডেল থানায় যুবলীগ নেতা টিপুকে ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে উক্ত মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরের দিন সোমবার (৬ নভেম্বর) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই নাশকতায় টিপুর গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তার জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে।
ফেনী সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আবছার আপন দাবি করেন, টিপুর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সঙ্গে আঁতাতের তথ্য পাওয়া গেছে। যে কারণে টিপুকে গত ২৭ অক্টোবর সদর উপজেলা যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অগ্নিসন্ত্রাসে ফেনী যুবলীগের একজন পদধারী নেতার সংশ্লিষ্টের অভিযোগ ফেনী আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আপন বলেন, কারও খারাপ কাজের দায়িত্ব দল নেবে না।
টিপুকে ২৭ অক্টোবর দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত এমন কোন তথ্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আপন বলেন, এটি গোপনীয়তার বিষয় নয়। কেউ জানতে চাইলে আমরা জানিয়েছি। এবিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। হয়তো ওই ভাবে প্রচার হয়নি।
একই প্রসঙ্গে জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবীর রতন বলেন, টিপুকে আরও আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তা প্রচার করা হলে বিতর্ক তৈরি হত না।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) রাতে জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক নিজাম উদ্দিন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৭ অক্টোবর নুর উদ্দিন টিপুকে যুবলীগের পদ থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা টিপু ২০১৪ সালে বিরোধী দলের রাজনীতি ঠেকাতে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতেন। বিএনপি-জামায়াতকে দমন করতে তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল। স্থানীয়রা আরও দাবি করেন, ধলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের রোকন নুরুল করিম ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন ইউপি সদস্য মোশারফকে ধরে নিয়ে ওই এলাকার পাল বাড়ির সামনে ব্যাপক মারধর ও গুলি করেন টিপু।
দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের একজন পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে টিপুর নাম শোনা গেলেও হঠাৎ করে বিরোধীদের সঙ্গে তাকে জড়ানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি বলেন, সে হয়ত ভেবেছে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসবে না।
স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করছে, টিপুর সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আহমেদ মুন্সীর ব্যক্তিগত বিরোধ থাকায় তাকে ষড়যন্ত্র করে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। অন্য একটি সূত্র বলছে, টিপুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনার পর ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সীকে ফেনী মডেল থানায় দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ১ অক্টোবর ধলিয়া ইউনিয়নের সোমবারিয়া বাজারে টিপুর হাতে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত হন মুন্সী চেয়ারম্যান। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে নাটক সাজিয়ে মুন্সী চেয়ারম্যান টিপুকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, টিপু আমার নিজের লোক। তার সঙ্গে আমার কখনো দূরত্ব ছিল না। তবে শুনেছি টিপু সরকার বিরোধীদের সঙ্গে কাজ করেছে। তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো সে বিষয়ে আমরা অবগত নই।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোলে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৪টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন রাস্তায় গাছ ফেলে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। পরে তাদের হাতে থাকা লাঠিসোটা দিয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় দুর্বৃত্তরা ভাই ভাই ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির চিনি বোঝাই ট্রাকে আগুন দেয়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওইদিন ট্রাক মালিক ও ভাই ভাই ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক উজ্জল বৈদ্য বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
তারেক চৌধুরী/আরকে