ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা

করোনাভাইরাস বা করোনা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে তার কাছে যাচ্ছেন না কেউ। নিকট আত্মীয় এমনকি সন্তানরাও এগিয়ে আসছেন না। সংক্রমণের ভয়ে লাশ স্পর্শ করছেন না কেউ। ঠিক সেই সময় শাহরাস্তি উপজেলাসহ চাঁদপুরের সব এলাকায় করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে একের পর এক মরদেহ দাফন করে যাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা।

করোনায় মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় কাজ। বেশিরভাগ সময় মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরাও কাছে আসেন না ভয়ে। লাশের গোসল থেকে শুরু করে দাফনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

সংক্রমণ ভয়কে দূরে ঠেলে পরম মমতার কাফনে জড়িয়ে শেষ সম্মানটুকু দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় লাশ সমাহিত করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সৎকার করেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের লাশ।

জানা যায়, শুধু শাহরাস্তি উপজেলায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা এ পর্যন্ত করোনা বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ২৫টি লাশ দাফন করেছেন। চাঁদপুরব্যাপী তৈরি হওয়া ৮টি টিমের সদস্যরা দাফন করেছেন ১৬৬টি লাশ। যার মধ্যে ৬ জন হিন্দু ও ৩ জন খ্রিষ্টান রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মাওলানা মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিমের নির্দেশে চাঁদপুরে যেখানেই করোনা বা করোনা উপসর্গ নিয়ে কারো মৃত্যু হয়, সংবাদ পেলেই ছুটে যান তারা। কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরেকেই নিজের সামাজিক দায়িত্ব মনে করে মৃতের কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তারা।

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মঈনুল ইসলাম কাজল জানান, আমার এক নিকটাত্মীয় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পেয়েই ছুটে আসেন ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকরা। ঈদের আগের রাতে নিজেদের সব কাজ ফেলে আমার ওই আত্মীয়কে দাফন করতে গিয়ে ভোর হয়ে যায়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শাহরাস্তি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক টিম সমন্বয়ক হাফেজ নূর মোহাম্মদ জানান, সংক্রমণের ভয়ে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও কাছে আসেন না। এই মৃত ব্যক্তিরা তো আমাদেরই কারও না কারও আপনজন, তাই আমরা ভয় পাই না। গোসল থেকে শুরু করে দাফনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমরা যখন ঘরে ফিরি, তখন মনে হয় নিজের কাছের এক ভাইকে যথাযোগ্য সম্মানটুকু দিয়ে কবরস্থ করতে পেরেছি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলার সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের প্রধান শেখ মো. জয়নাল আবেদীন জানান, আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আর যাতে কাউকে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। আর কেউ মারা গেলে তার স্বজনরা যাতে ভয় না পান। আপনজনের লাশ দাফন আপনাদেরই দায়িত্ব। একান্ত অপারগ হলে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিমকে খবর দিন।

শরীফুল ইসলাম/এমএসআর