বাবুই পাখির ছানা পুড়িয়ে হত্যা

ঝালকাঠির নলছিটির ভৈরবপাশা ইউনিয়নে বাবুই পাখির বাসায় আগুন দিয়ে ছানা পুড়িয়ে মারার অভিযোগের সত্যতা মিললেও নলছিটি ইউএনও রুম্পা সিকদার কেন অভিযুক্ত জালাল সিকদারকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এ নিয়ে ফেসবুকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুম্পা সিকদার কেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে জাননি এ নিয়েও গণমাধ্যমকর্মীসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অভিযুক্ত জালাল সিকদার কয়েক মাস আগেও তার ধানখেতে হাঁস ঢোকায় জীবন্ত হাঁসকে দুই পা ধরে ছিঁড়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ আছে।

সেবারও ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনে এসে কান্নাকাটি করায় মামলার হাত থেকে তাকে বাঁচিয়েছিলেন বলে জানান হাসনাইন তালুকদার দিবস নামে এক গণমাধ্যমকর্মী।

শনিবার ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীকে বাবুই পাখির ছানা পুড়িয়ে হত্যার বিষয়টি জানানো হলে তিনি ঘৃণা প্রকাশ করার পাশাপাশি বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে জানান।

রোববার (১১ এপ্রিল) দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হাসান। তখন তার সঙ্গে ছিলেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাব সম্পাদক, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ফেসবুকে ঘটনাটি প্রথম প্রকাশকারী শিপন। 

এনডিসি রাত ৯টায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা পাখির বাসায় আগুন দেওয়ার সত্যতা পেয়েছি, আবার পাখির ছানা পোড়ানোরও সত্যতা পেয়েছি। কিন্তু গণমাধ্যমে ‘৩০, ৩৩, অর্ধশত বা অসংখ্য পাখি হত্যা’ বলে যে সংখ্যাটি বলা হয়েছে এর কোনো সত্যতা পাইনি।

তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে প্রথম প্রকাশকারীও কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারেনি বা অনেক মৃত পাখির ছবিও দেখাতে পারেনি। যতটুকু মনে হচ্ছে সংখ্যাটি খুবই কম হবে।

এনডিসি ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই সেখানে জিয়াউল ইসলাম নামে ঝালকাঠি বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা আসেন। তিনি সংবাদকর্মীদের দেখেই উত্তেজিতভাবে বলতে থাকেন, এখানে আগুন দেওয়ার ঘটনাই ঘটেনি, ভুয়া সংবাদ করে এই লোকটিকে এবং সরকারি লোকজনকে হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, যেখানে তালগাছ ও বাবুই পাখির বাসা সেখানে জালালের ধানখেত নেই। রাস্তা ও কয়েকটি দোকানের পর তার চাষের জমি। বাবুই পাখি তার জমির ধান খেয়ে ফেলে এই অভিযোগে দূরবর্তী অন্য মালিকের তালগাছে বাবুই পাখির বাসায় আগুন দেন তিনি।

অভিযুক্ত জালাল সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাবা আমার ধানখেতে যাইয়া দ্যাহেন, কতো ধান খাইয়া আমার শ্যাষ করছে। আমি বাঁশ দিয়া তিনডা বাসা পাখি হুদ্দা হালাইছি। তাও নলছিডির ম্যাডামের দারে মাপ চাইছি, লিখিত দিছি এ বুল আর করমু না।’

ইউএনও রুম্পা সিকদার বলেন, ইতোমধ্যে নলছিটি থানায় জেলা বন বিভাগ ও এক সাংবাদিকের পক্ষ থেকে দুইটি জিডি করা হয়েছে। ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর সত্যতা যাচাইয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) পাঠানো হয়েছিল। আগুন দেওয়া বা এতো পাখি মারার কোনো সত্যতা না পাওয়ায় অভিযুক্তকে ডেকে আনা হয়।

তিনি আরও বলেন, ভৈরবপাশা ইউনিয়নের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে অভিযোগকারী শিপন ছাড়া আর কেউ জালালের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়নি। তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। তাই মুচলেকা নিয়ে বিষয়টির সমাধান করা হয়। অনেক পাখি হত্যার সত্যতা পেলে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিতাম।

ইসমাঈল হোসাঈন/এমএসআর