মো. সফিজ উদ্দিন আকন

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সফিজ উদ্দিন আকন। বয়স ৮০ বছর। ৬ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী বন্যায় মা-বাবাসহ পরিবারের ২৬ জনকে হারান তিনি। সে ঘটনার ৫৩ বছর কেটে গেলেও ভয়াল সেই ১২ নভেম্বর রাতের ধ্বংসযজ্ঞের কথা আজও ভুলতে পারেননি তিনি। শুধু সফিজ উদ্দিন আকন নয়, উপকূলের সেই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় অনেককেই।

আজ থেকে ৫০ বছর আগে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সাইক্লোন আঘাত হানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। শতাব্দীর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সেদিন লন্ডভন্ড হয়ে যায় পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সন্দ্বীপসহ উপকূলীয় বিশাল জনপদ। প্রাণহানি ঘটে পটুয়াখালীর প্রায় ২ লাখ মানুষের। মারা যায় লাখ লাখ গবাদিপশু ও জীবজন্তু।

৮০ বছর বয়সী সফিজ উদ্দিন আকন ঢাকা পোস্টকে বলেন,‘সিডর’,‌ ‘নার্গিস’, ‘আইলা’ ও রোয়ানুর আঘাতের সংবাদ এ অঞ্চলের মানুষ আগাম জানতে পারলেও সত্তরের ‘গোর্কি’র কথা আবহাওয়া অধিদপ্তর আগে জানাতে পারেনি। তাই সেদিন প্রকৃতির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে উপকূলের লাখো মানুষ। ১২ নভেম্বর অন্য উপকূলের মতো পটুয়াখালীতেও ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে এবং মুহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুরো উপকূলীয় এলাকা।

তিনি আরও বলেন, ১২ নভেম্বর সারাদিন বৃষ্টি ছিল। আমার বড়ভাই বিল থেকে গরু এনে গোয়াল ঘরে বাধেন। এর মধ্যেই শুরু হয়ে যায় বাতাস। বাতাসের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, সব উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন খুব ভয় পাই। এর মধ্যেই পানি আসতে শুরু করে, বন্যার পানিতে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বাতাস আর পানির চাপে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামের গাছের সঙ্গে আমি ঝুলে ছিলাম। তবে আমি সেদিন বেঁচে ফিরলেও আমার মা-বাবাসহ পরিবারের ২৬ জনকে হারিয়েছি সেই রাতে।

পুরো উপকূলজুড়ে লাশের গন্ধ ছিল প্রায় এক মাস। হাজার হাজার লাশের ভিড়ে সেদিন আমি আমার পরিবারের সবার লাশ খুঁজছিলাম কিন্তু সেদিন মায়ের লাশ পেলেও পরিবারের অনেকের লাশ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে আমাদের জীবনে দুর্ভিক্ষ চলে এসেছিল। সবকিছু হারিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য অনেক পরিশ্রম এবং সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কলাপাড়ার ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভার দলনেতা মো. শফিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তখন ছিল রমজান মাস, সকাল থেকেই মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ছিল। এখনকার মতো প্রযুক্তি উন্নত না থাকায় সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারেনি আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে তাদের কপালে। রাতের মাঝামাঝি সময়ে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘুমের মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ ভেসে যায় জলোচ্ছ্বাসে। পুরো উপকূলীয় এলাকা পরিণত হয় এক ধ্বংসস্তূপে।  

এসএম আলমাস/এএএ